ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলোর বেপরোয় চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঝরছে তাজা প্রাণ। ময়লা পরিবহনের এসব গাড়ি দিন দিন রূপ নিচ্ছে দানবে। বেপরোয়া চালাচল ও চালকের অসাবধানতায় কারণে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিক্ষার্থী, সংবাদকর্মী, গৃহিনী, রিকশাচালকসহ কেউই। পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে। কোন নিয়মনীতি না মেনে দিনরাত তাদের ইচ্ছেমতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ময়লা পরিবহন করা হয়। একারণে সড়কে চলাচলকারী মানুষের অসুবিধার কথা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ একবারের জন্যও ভাবেন না। আর বেশিরভাগ গাড়ির চালকরাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। কোন কোন গাড়ির চালকরা সবসময় থাকেন মাদকাসক্ত। বেশিরভাগ ময়লার গাড়িরই চালক নেই। পরিচ্ছন্নকর্মীরাই চালিয়ে নিয়ে যায় এসব গাড়ি। সর্বশেষ গতকাল আরও একজনের প্রাণ কেড়ে নেয় ডিএনসিসির ময়লার গাড়ি। নিহতের নাম আহসান কবীর খান। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকার সাবেক কর্মী। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন তিনি। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জাহিদ আহসান বলেন, তার লাশ কলাবাগান থানায় নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। এ নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা সহপাঠী নিহতের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়ে আসছেন। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেই ময়লার গাড়ির চালক রাসেল আসলে করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও চালক নন। তিনি একসময় ডিএসসিসি’র ক্লিনার হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতেন। এখন তার সেই ক্লিনারের চাকরিটিও নেই। তিন বছর আগে রাসেল যখন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। তখন তিনি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চালাতেন। এরপর তার চাকরি চলে গেলেও গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি। কীভাবে, কার অনুগ্রহে তার এই অবৈধ কর্মটি অব্যাহত ছিল। ডিএসসিসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইতোমধ্যে রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি চাপা ও ধাক্কায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় মোস্তফা নামের এক রিকশাচালক নিহত হন। এর আগে গেণ্ডারিয়ার দয়াগঞ্জ মোড়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) টেলিফোন বিভাগের স্টাফ খালিদ, ভ্রাম্যমাণ পান বিক্রেতা আবদুল খালেক হাওলাদার, গৃহবধূূ নুরজাহান বেগম ও টিটিপাড়ায় স্বপন আহমেদ নামে এক ব্যাংক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এ সবগুলো ঘটনাই ঘটিয়েছে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নিবন্ধিত চালক ছাড়া ডিএসসিসির বাকি গাড়িগুলো চলে অদক্ষ ও অনিবন্ধিত চালক দিয়ে। কখনো কখনো আবার ক্লিনারদেরও দেখা যায় চালকের ভূমিকায়। ফলে গাড়িগুলো দিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার অনেক গাড়ি চালাচ্ছে কিশোর। যার নেই লাইসেন্স কিংবা গাড়ি চালানোর কোনো অনুমতিপত্র। সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহনের গাড়ি পুলিশ চেক করে না। তাই কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। এমনটাই জানান কয়েকটি ময়লার গাড়ির চালক।
ডিএসসিসি’র তথ্যানুযায়ী, ডিএসসিসিতে মোট যানবাহন আছে ৫১৩টি। এর মধ্যে ১৫০টি গাড়ি নিবন্ধিত। আর নগর সংস্থাটির নিবন্ধিত চালকের সংখ্যা মাত্র ১৪৭। আর ২০০ গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক দিয়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন