কর্তৃপক্ষের লাগাতর উদাসীনতা আর অবহেলায় রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন প্রায় বন্ধ। ফলে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এর সাথে বেসরকারি নৌযানে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস উঠছে। সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পরে সরকারকে চাপে রেখে বেসরকারি নৌযান মালিকরা বরিশাল-ঢাকা নৌপথে ডেকের ভাড়া ২শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকায় বৃদ্ধি করেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসির স্টিমারে ভাড়া মাত্র ১৭০ টাকা। কিন্তু সংস্থাটি ভাড়া বৃদ্ধি না করলেও সাধারণ যাত্রীরা সে সুযোগ ভোগ করতে পারছেন না।
একাধিক নৌযান বসিয়ে রেখে সংস্থাটি দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি পরিচালনা করছে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন। নানামুখী উদাসীনতায় রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসির দৈনিক রকেট স্টিমার সার্ভিস এখন সপ্তাহে ৩ দিন চলছে। অথচ এ রুটের জন্য ৩টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সংগ্রহ করা দুটি আধুনিক নৌযান রয়েছে সংস্থাটির হাতে। নানা অজুহাতে সংস্থাটির হাতে থাকা ‘পিএস টার্ণ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজগুলো বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে পিএস মাহসুদ প্রায় দেড় বছর বসিয়ে রাখার পরে গত এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাটির ডকইয়ার্ডে মেরামতে। আগামী মাসের মাঝামাঝি নৌযানটি যাত্রী পরিবহনে ফিরবে বলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
অপর প্যাডেল নৌযান ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে এক ব্যক্তিকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়ে গেছেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী। রেলওয়ে থেকে সংগ্রহ করা অপর যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনারগাঁও’ একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসির কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যটন করপোরশেনের কাছে পুনরায় ইজারা দিয়েছে। জনগণের অর্থে কেনা এসব নৌযান সাধারণ মানুষের পরিবর্তে কতিপয় ব্যক্তির বাণিজ্য সহায়ক হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অনিয়মিতভাবে।
‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামে নতুন দুটি ব্যয়বহুল নৌযানে প্রতি ট্রিপে ৩-৪ লাখ টাকা লোকসানের কারণেও সার্ভিসটি সম্প্রসারণ করছে না সংস্থাটি। আর নিয়মিত সার্ভিস না থাকায় সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার নৌযানে ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ এ রুটের জন্য নির্ধারিত ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলো দীর্ঘদিন নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বাণিজ্যিক পরিচালনা না করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
সংস্থাটির একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞ এসব নৌযান ভারি মেরামত করে আরো ন্যূনতম ২৫ বছর যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলেও মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পিএস মাহসুদ পরিপূর্ণ মেরামত করে আগামী মাসে যদি যাত্রী পরিবহনে ফিরতে পারে, তবে ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ এর ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? পাশাপাশি ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ নৌযানটির ইজারাও অবিলম্বে বাতিল করে যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি ৪টি প্যাডেল জাহাজ ব্যয় সাশ্রয়ী এবং যাত্রীবান্ধব বলে স্বীকার করেন। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মো. গফুর সরকার প্যাডেল জাহাজগুলো মেরামতের মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সময় সুযোগমত কথা বলবেন বলেও জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন