বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধে তাকে বিদেশে নেয়া অতি জরুরি। কারণ এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান অসুখ হচ্ছে তার পরিপাকযন্ত্রে। তার (খালেদা জিয়া) অনেক অসুখ। এখন যেটা তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে সেটা হচ্ছে, তার পরিপাকতন্ত্র থেকে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই রক্তক্ষরণকে বন্ধ করা।
গতকাল শনিবার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নব্বইয়ের ডাকসু ও ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ডা. শামসুল আলম মিলনের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এখন ঠিক কোন জায়গায় রক্তপাত হচ্ছে এটাকে বের করার জন্যে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তাররা গত কয়েকদিন ধরে কাজ করছেন। চিকিৎসার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে তারা করেছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা এগুতে পারছেন না। কারণ সেই ধরনের কোনো টেকনোলজি বাংলাদেশে নেই। যে কারণে ডাক্তারা বার বার বলছেন যে, তাকে (খালেদা জিয়া) একটা এডভান্স সেন্টারে নেওয়া দরকার যেখানে এই টেকনোলজি ও যন্ত্রপাতিগুলো আছে যেখানে গেলে তার যে সঠিক রোগ, সেই রোগের জায়গাটা তারা ধরতে পারেন।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, যারা সরকারি দলের রাজনীতি করছেন তাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার তো নেই, মানবিক বোধও নেই। আর নিজের সম্পর্কে তাদের এতো বেশি দাম্ভিকতা যে তারা যেকেনো ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কটূক্তি করতে তারা এতটুকু দ্বিধা করেন না।
তিনি বলেন, সব কিছু ভুলে যায় তারা। ১/১১ তে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন তখন এই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার মুক্তির জন্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রের বিশ্বাস করা এমন একজন নেত্রী আজকে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কেনো দিচ্ছেন সবাই আমরা বুঝি, সবাই জানে। আপনি যদি সরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনি মনে করছেন যে, আপনার সামনে বড় একটা কাটা সরে গেলো। আপনার ক্ষমতায় থাকা আপনার জন্য বেশি সুবিধা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভ্মৌত্বকে রক্ষা করার জন্য যিনি প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এটা শুরু হয়েছে ্১/১১ থেকে। ১/১১ থেকে বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারই পরিণতি হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে যদি জনমত জরিপ করেন দেখবেন শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মানুষ এর পক্ষে। আওয়ামী লীগের অনেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পক্ষে, অনেক মন্ত্রীর সাথে আলাপ করেন দেখবেন তারা বলবেন, তাকে যেতে দেয়া হোক। বিপক্ষে শুধু একজন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো না হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে, ঢাকা থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা রাজপথে শহীদ হবো।
আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুদ্দিন মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব) অধ্যাপক হারুন আল রশিদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন