অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আবুল হোসেন সরকারি চাকরিজীবী। তার মাসিক বেতন প্রায় ৩০ হাজার টাকা। রাজধানীর পলাশী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সে প্রতি সপ্তাহের মতো গতকালও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজীয় জিনিস কিনতে এসেছে। কিন্তু বাজারে হঠাৎ করে সকল ধরনের জিনিসের দাম এত পরিমাণে বেড়েছে গেছে, তার বাজেটের টাকায় অন্যদিন ভালো মতো বাজার করতে পারলেও গতকাল তার চাহিদার অর্ধেক একটু বেশি বাজার করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পলাশী বাজারে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় কথা হলে আবুল হোসেন এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চাকরি করে যা বেতন পাই তার অর্ধেক বাসা ভাড়ায় চলে যায়। খাওয়ার জন্য যে পরমিাণ টাকার বাজেট রাখি তাতে কোনরকম মাস চলে। অন্যান্য খরচের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে এর মধ্যে আবার যেভাবে জিনিসের দাম বেড়েছে এতে করে পরিবার নিয়ে বসবাস করাই কষ্ট। পলাশীর বাজারে এ সময় আরো কথা হয় গাড়ি চালক খাইরুলের সাথে। তিনি বলেন, গরীব মানুষ মোটা চাল কিনে খায়। কিন্তু চালের দামের যে অবস্থা আমাদের মতো গরীবের না খেয়ে থাকতে হবে। আর সবজি তো আমাদের মতো মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
শুধু তারা নয়, তাদের মতো লাখ লাখ গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষ আছে রাজধানীতে। জিনিসের দাম বাড়ার কারণে তাদের অবস্থাও করুন। এছাড়া বস্তিতে যারা বসবাস করে তাদের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠছে দিন দিন। এই সবজি থেকে চাষীরাও বড় ধরনের লাভ পাচ্ছে না। সবজি বাজারের এক ধরনের সিন্ডিকেট আছে রাজধানীতে। তারাই সবজির বাজারে দাম বাড়িয়ে থাকে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাকসবজিসহ বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
সবজির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে ৬০ টাকার কমে প্রায় কোনো সবজি নেই। সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা কেজিতে বেশকিছু সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর হাতিরপুল, শান্তিনগর, পলাশী, মোহাম্মদপুরের টাউন হলসহ বেশ কিছু কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৮০ টাকা, মুলা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, পটল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি আকার ভেদে প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি কচু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কচুরলতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতিহালি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পেঁপে ৩০/৪০ টাকা, প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, লাউ আকার ভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতিকেজি আলু ২৬ থেকে ৩০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তবে বাজার ভেদে দামের কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে।
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সয়াবিন তেলে প্রতি লিটারে বেড়েছে ৬ টাকা। ফলে ৯৮ টাকার এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১০৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে বেড়ে যা হয়েছিল বর্তমানে সে দামেই বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, রুই কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং কৈ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে ইলিশের দেখা মেলেনি। এ ছাড়া গরুর গোশত ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা, খাসির গোশত ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুরগীর দাম আগের মতো রয়েছে।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি বলে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, বিশেষ কোন সবজির দাম বাড়তে পারে, কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে যাওয়া কোন স্বাভাবিক বিষয় হতে পারে না। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট ব্যবসা করে বলে এভাবে সবজির দাম বাড়ানো হয়।
পলাশী বাজারে সবজি কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ান হোসেন বলেন, সবজির দাম কমে না, কখনও ২ থেকে ৪ টাকা কমলেও পরবর্তী সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায়, এসব তো স্বাভাবিক না। প্রশাসন থেকে যদি বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হতো তাহলে কিছুটা স্থিতিশীলতা বজায় থাকতো।
হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আউয়াল বলেন, সবজির দাম তো প্রতি সপ্তাহেই বাড়ে-কমে। এখন যেসব সবজির মৌসুম শেষের দিকে রয়েছে, সেগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে শীতের সবজিও আসতে শুরু করেছে। তাই এগুলোর দামটা একটু বাড়তি। তবে আগামী দুই-তিন সপ্তাহ পরে শীতকালীন সবজি পুরোপুরি বাজারে এসে পড়লে দাম কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন