শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ওমিক্রনের উৎস এইডস রোগীর শরীর?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪৪ এএম

গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস বাসা বাঁধলে মিউটেশনের আশঙ্কা বাড়ে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। ফলে তারা ধারণা করছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এইডস রোগীর শরীর থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে। এমনকী শুধু এইডস নয়, দীর্ঘস্থায়ী কোভিড-১৯ এর থেকেও ঘটে থাকতে পারে ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন, মনে করছেন গবেষকদের একটি দল।

মহামারীর সময়ে এমনটা বার বার দেখা গিয়েছে যেখানে দীর্ঘায়িত সংক্রমণ হলেই ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতা বাড়ে। আর তাতে শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতার সঙ্গে আপোষ করে নিতে পারে এমন সব পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে সেই সব প্রতিলিপিরা। অথবা, ভাইরাস তার জিনের এমন পরিবর্তন ঘটায় যাতে শরীরের তৈরি হয়ে যাওয়া অ্যান্টিবডির প্রভাব তাদের উপর মারাত্মক না হয়। খুব সহজ করে বলতে গেলে বলতে হয় এ যেন ছোটখাট ভুল যা লেখার সময় হামেশাই হয়ে যায় মানুষের।

ভাইরাসও যখন নিজের প্রতিলিপি রেখে যায়, তখন কিছু ভুল যেন তার অজান্তেই হয়ে যায় জিনের গঠনগত ক্ষেত্রে। অনেক সময় এই পরিবর্তন তৈরি হয় ভাইরাসের প্রোটিনে। তার ফলে ভাইরাসটি যে কোনও একটি দিকে ব্যপক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হয় তার সংক্রামক ক্ষমতা বাড়ে, অথবা রোগের মারণ ক্ষমতা। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই ধরণের যে কোনও পরিবর্তনই মানব শরীরের ভিতরে ঘটছে। কারণ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ধারক কোষের বাইরে কোনও রকম প্রতিলিপি তৈরি করতে পারছে না সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল একটি প্রতিবেদন। সেখানে এক বিশেষ গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল কী ভাবে এক দুর্বল প্রতিরোধক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির শরীরে ১০২ দিন ধরে ক্রমাগত প্রতিলিপি তৈরি করে গিয়েছে মারণ ভাইরাস করোনা। আর প্রায় প্রতিবারই সে বদলে ফেলেছে নিজের চরিত্র। ফল স্বরূপ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার দীর্ঘ ১০২ দিন পর মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।

এই দীর্ঘ সময়ে ২৩ বার ওই ব্যক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় দেখেছিলেন খুব সহজে ওই ব্যক্তির শরীরে একের পর এক মিউটেশন ঘটিয়েছিল ভাইরাস। অথবা তারা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।

গবেষকদের দাবি, ওই ব্যক্তির শরীরের অবস্থাই এ জন্য দায়ী ছিল। ৭০ বছরের ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন এবং সে জন্য তার কেমো চিকিৎসা চলছিল। লিম্ফোমা হল রক্ত লসিকার ক্যানসার। লসিকা যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার যোগ সূত্র হিসাবে কাজ করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই যেখানে দুর্বল সেখানে মারাত্মক আঘাত হানে করোনা

প্রায় ৫৭ দিন ধরে ওই রোগীর শরীরে দু’দফায় রেমডিসিভির প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তা কোনও কাজে দেয়নি। তারপর তার উপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। তখনও পর্যন্ত করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিঃসংশয় ছিলেন না চিকিৎসক গবেষকেরা। ওই ব্যক্তির উপর প্লাজমা থেরাপি শুরু করার পর বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন ভাইরাস দ্রুত তার রূপ বদলাতে শুরু করছে।

গবেষকদের দাবি, লিম্ফোমা ক্যানসার এবং তার চিকিৎসায় চলা কেমো থেরাপির কারণেই ওই ব্যক্তির রক্ত কোষগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্ত যা শরীরে রোগ প্রতিরোধী শক্তি তৈরি করে, তা-ই দুর্বল হওয়ায় ভাইরাস সুযোগ পেয়ে যায় নিজেকে ক্রমশ বদলে আর ভয়াল রূপ ধারণ করার।

আবার গত বছর NEJM (নিউ ইংল্যান্ড জর্নাল অব মেডিসিন)-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, এক দুর্বল রোগ প্রতিরোধী রোগীর শরীরে ১৫২ দিন ধরে প্রায় ১২টি জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়েছে করোনা ভাইরাস। তার মধ্যে বেশির ভাগই ঘটেছিল স্পাইক প্রোটিনে। গবেষকরা দেখিয়েছিলেন এই ১২টি পরিবর্তনের মধ্যে এমন বেশ কয়েকটি ছিল যারা মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে তৈরি হয়েছিল।

নানা গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, ইমিউনোসাপ্রেশনের বিষয়টি, যা ভাইরাসের মিউটেশনে সহায়ক হয়। ইমিউনোসাপ্রেশন হল এমন ব্যবস্থা যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখে। হয়তো খানিকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই। কেন এমন করা হয়? দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়। যেমন ধরা যাক কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে ওষুধ প্রয়োগ করে শরীরকে এমন করে তোলা হয়। যাতে শরীর অন্যের অঙ্গকে সাদরে গ্রহণ করতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে এক জনের শরীরে অন্যের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হলে শরীর তাকে শত্রু ভেবে ত্যাগ করতে চাইবে।

তা ছাড়া, ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রোগ প্রতিরোধী শক্তি কমে যায়। কমে যায় কেমো বা রেডিও থেরাপির ক্ষেত্রেও। এ সব ক্ষেত্রে ভাইরাস সহজেই মিউটেশন ঘটিয়ে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সফলও হয়। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সূত্র: টিওআই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন