ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আমেজ কখনো উৎসবমুখর পরিবেশ। আবার কখনো সহিংসতা। আরেক দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি। অপরদিকে এবার হয়তো কিছুটা আগেই শীত এসেছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে।
কুয়াশার ছোঁয়ায় মিষ্টি রোদে সোনালী রঙে ছেয়ে থাকা হিমালয় সংলগ্ন ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কৃষকের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের নবান্ন উৎসবের আমেজ। সোনালী ফসল ঘরে তুলে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বাজারেও ধানের বাড়তি দাম থাকায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন কৃষক। তাই কৃষকপাড়ার বাতাসে এখন পিঠা-পুলি বানানোর ধুম পড়েছে।
জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষকরা নবান্ন উৎসব পালনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বধূরা ব্যস্ত নতুন ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পুলি এবং ক্ষীর তৈরিতে। পিঠা তৈরির সময় সদর উপজেলার মোহাম্মদপুরের গ্রামের কৃষাণী আনিসা বেগমের মুখে ছিল মিষ্টি হাসি। মধ্য হেমন্তে শীত আসায় নবান্ন পালন করতে পেরে পরিবারসহ তিনি ভীষণ খুশি।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ও পীরগঞ্জে গত বছর থেকে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। এই নতুন গুড়ের সাথে নতুন ধানের পিঠা যেন অনেকটা সোনায় সোহাগা। চলতি বছর আমন ধানের ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। এবার নবান্ন উৎসব জেলা থেকে উপজেলা ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে পালন করা হচ্ছে।
দিনমজুর তোফাজ্জল জানান, করোনার শুরু থেকেই সঙ্গী হয়েছে কষ্ট। করোনা কমে আসায় কষ্টও কমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি কাজে ফিরেছেন। দিন শেষে যা আয় হচ্ছে তাতো করোনার ভয়াবহ অবস্থার সময় ছিল না। এই আয়ে শান্তি পাচ্ছেন। সবার সাথে মিলেমিশে নবান্নের পিঠা-পুলি খাবেন।
শহর থেকে গ্রাম ঘুরে দেখা যায় করোনা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতিথেয়তা বেড়েছে। শীতের শুরুতেই সবাই পিঠা পুলির স্বাদ নিতে একে অপরের বাড়ি যাচ্ছেন। কচুবাড়ি গ্রামের কৃষক আইজউদ্দিন জানান, তিনি ইতোমধ্যে ৫ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। বৃষ্টি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হলেও শেষ মুহূর্তে ফলন ভালই হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এবার জেলার পাঁচটি উপজেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটা-মাড়াই পুরোদমে চলছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা অনেকটাই খুশি।
ঠাকুরগাঁওয়ের বাজারে মোটা ধান এক হাজার ৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাই কৃষকরা নবান্নে উৎসবে মেতে উঠেছেন। ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকের মুখ থেকে এমন হাসি কখনোই মলিন হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন