ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, কোন দেশে আছি? মন চাইছে আত্মহত্যা করি। তারিখ ও মাসের নাম বাংলায় লেখার কারণে একটি ব্যাংক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের চেক ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, মন চাইছে আত্মহত্যা করি। একটি চেকে আমি ডিসেম্বর বাংলায় লিখেছি বলে কাউন্টার থেকে চেকটি ফেরত দিয়েছে। কোন দেশে আছি? মন্ত্রীর এই বক্তব্য পোস্ট করার পর এটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বার শেয়ার করা হয়েছে পোস্ট। এছাড়া শতাধিত মন্তব্য করেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। প্রায় ৩ হাজার ২১ ফেসবুক ব্যবহারকারী রিয়্যাক্ট দিয়েছে।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা লেখা দেখলে যারা চেক ফিরিয়ে দেয়, তাদের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। চুপচাপ বসে থাকলে ধারাবাহিকতা হয়ে যাবে। তারা প্র্যাকটিস করবে। মনে করবেন না যে, আমি মন্ত্রী হয়েছি বলেই প্রতিবাদ করেছি। মন্ত্রী না থাকলেও প্রতিবাদ করব। আমি জন্ম থেকেই প্রতিবাদ করছি। এ প্রতিবাদ আমার রক্তের মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমার দেশটা তৈরি হয়েছে বাংলা ভাষার জন্য। এই দেশের সাংবিধানিক রাষ্ট্রভাষা বাংলা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো বায়ান্ন সাল থেকে বাংলায় বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আমরা তার উত্তরসূরি হিসেবে কেমন করে বাংলা ভাষার বাইরে যেতে পারি? এটা চিন্তারও বাইরে।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে সবাই বলতো বাংলা সব জায়গায় ব্যবহার করা যায় না। আমি বলি, এমন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস নেই যেখানে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা যায় না। তাহলে বাংলা আমি ব্যবহার করব না কেন?
বাংলা ভাষা ব্যবহার আসলে মানসিকতার বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যদি আমি বাংলা ভাষা ব্যবহার না করি তাহলে সেটা আমার মানসিকতা। এই মানসিকতা দূর করা দরকার। যত জায়গায় সম্ভব, যত জায়গায় আমি প্রতিবন্ধকতা পাই, তত জায়গায় প্রতিবাদ করি। কোনো অবস্থাতেই আমি ছাড় দিই না। যে অবস্থাই থাকুক, আমি প্রতিবাদ করবই। আমি যে পজিশনেই থাকি, প্রতিবাদ করবোই।
মন্ত্রী বলেন, যেদিন থেকে ব্যাংকে চেক লিখি, কোনো দিন আমি ইংরেজি হরফ ব্যবহার করিনি। স্বাক্ষরও বাংলায় দিই। অতএব এ অবস্থায় আমি কমপ্রোমাইজ করব না।
জানা গেছে, মন্ত্রী তার পরিচিত একজনকে একটি চেক দেন। তাতে ডিসেম্বর মাসের বানানটি বাংলায় লেখা ছিল। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় জমা দিলে চেকটি প্রথমে ফেরত দেওয়া হয়। ওই পরিচিত জন বাসায় ফিরে মন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করেন। তারপর মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে নিজে ব্যাংকের ওই শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্যাংকের শাখা থেকে পুনরায় চেকটি অনার করা হয়। মন্ত্রীর হিসাব ব্যাংকটি মতিঝিলের প্রধান শাখায়। অতীতে চেক প্রধান শাখায় বাংলায় লিখে দিলেও কোনো সমস্যা হয়নি।
ফেসবুকে মন্ত্রীর অসয়াত্ব প্রকাশের পর বিভিন্নজন মন্তব্য করেছেন। ইরফান আহম্মেদ শরীফ লেখেন, ‘চেক বাংলায় লিখার নিয়ম করা হোক’। ইসরাত জাহান রাখি নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘স্যার, আপনাকে যদি এতোটা নির্যাতন করে, একবার ভাবুন আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে কতটা সহ্য করতে হয়। আপনার প্রতি অনুরোধ থাকল, এসব পরিবর্তন করে দিন।’ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘অগ্রহায়ণ ১৪২৮, লিখলে হয়তো জেলে নিতো’। আতাউর রহমান লেখেন, ‘আপনারা চাইলেই এর সমাধান নিয়ে আসতে পারেন স্যার। বাংলা নিয়ে তো অন্য কোনো মন্ত্রীর তেমন আগ্রহ নেই, যেটা আপনি করেন।’ জাকিয়া আফরোজ মুক্তি নামে একজন লেখেন, ‘সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু হোক।’ জি. এম. পানাউল্লাহ লেখেন, ‘ব্যাংকের কাউন্টারে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা ব্যাংকের নীতিমালা ও কার্যপ্রণালীতে প্রশিক্ষিত, এর বাইরের দুনিয়া তাদের অচেনা। খোলনলচে পাল্টে সঠিক পদ্ধতি অধিষ্ঠিত ও চালু না করা পর্যন্ত এর ব্যত্যয় হবে না। এটি নীতি নির্ধারণী বিষয়-যেদিকে দ্রুত নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ শাইখ সিরাজী লেখেছেন, ‘সব অফিসিয়াল কাজে বাংলা ভাষাকে আরো বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের’।
ওই পোস্টের কমেন্টে মন্ত্রী আবার লেখেন, আপনারা অনেকেই আমার দুর্দশায় সংহতি প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ। কেউ কেউ হা হা করেছেন। তাহারা ‘কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। সুখবর হলো অবশেষে চাপে পড়ে চেকটির কোনো পরিবর্তন ছাড়াই টাকা দেওয়া হয়েছে ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। তারা জানিয়েছে আর কখনো এমন ভুল বা বাংলা হরফ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন