নিফাক অর্থ ভন্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি। মুখে ইমানকে স্বীকার এবং অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলে। আর যে ব্যক্তি এরুপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকরা সাধারণত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরুপ কাজ করে থাকে। মুনাফিক সঙ্গী হিসেবে মুসলমান এবং কাফের উভয় দলের সাথেই থাকে। এরা প্রকাশ্যে নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করে কিন্তু গোপনে ইসলামের দিক নির্দেশনা অস্বীকার করে। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তায়ালা বলেন, আর আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, মুনাফিকরা নিশ্চয় মিথ্যাবাদী। (সূরা আল মুনাফিকুন-০১)।
মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। ১. মিথ্যা কথা বলা ২. ওয়াদা ভঙ্গ করা ৩. আমানতের খেয়ানত করা। নিফাক নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ। নিফাক অত্যন্ত জঘন্যতম একটি কাজ। যা মানুষের চরিত্র ধ্বংসের প্রথম কারণ। এর ফলে মানুষ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয় এবং নিজেদের ভিতর অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সমাজে মারামারি, হানাহানি, ঝগড়া-বিবাদ ও অশান্তি দেখা দেয়।
মুনাফিকরা বন্ধু বেশে মুসলমানদের বড় ক্ষতি করে থাকে। তবে এরা মানবজাতি এবং মুসলমানদের গোপন শত্রু হলেও আল্লাহ তায়ালা এদের কঠিন হুংকার দিয়েছেন। যার ফলে মুনাফিকরা দুনিয়ায় ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়। আখিরাতেও তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে কঠোর আজাব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।’ (সূরা আন নিসা-১৪৫)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কুরআনে তিন শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করেছেন। এক) মুমিন। দুই) কাফের। তিন) কিছু কাজ মুমিনের সমতূল্য আবার কিছু কাজে প্রকাশ পায় কাফেরের বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ মুনাফিক।
মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর প্রদর্শিত পথকে বিশ্বাস করে বিপরীতে কাফের অবিশ্বাস করে। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণির লোকেরা উপরোক্ত দুই শ্রেণিতে লেগে থাকে। এদের বৈশিষ্ট্য এমন- একজন ব্যক্তির সাথে ইমান, আখলাক, আখেরাত, পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে ভালো দিক আলোচনা করলে পরক্ষণেই অপর ব্যক্তির কাছে আলোচিত ব্যক্তির নামে বদনাম বলে বেড়ায় যা গোপনীয় রাখে। এরা সাধারণত কথা চাপা দিয়ে রাখে এবং অন্যের দোষ ধরতে এবং খুজতে ব্যস্ত থাকে। আরো একটি লক্ষণ বলা যায়, এরা সর্বদা আল্লাহর দিক নির্দেশনা ও প্রদর্শিত বিধানগুলো নিয়ে বেশি চিন্তায় মগ্ন থাকে যা পরবর্তী শিকরের আওতায় চলে যায় অথচ এরা নামাজী। এদের সাথে তর্ক জরানো থেকে বিরত বা কথা বলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেননা, পরক্ষণে ইমান নিয়ে আপনার মধ্যে এরা সন্দেহের বীজ বপন করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এদের জন্য দোয়া করুন এবং এই শ্রেণির লোকদের থেকে সম্ভব হলে বিরত থাকুন। আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করুন আমাদের অবস্থান যেন ১ম শ্রেণির কাতার অর্থাৎ মুমিনের পথে সামিল হয়। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন