বিমানবন্দরের রানওয়ে। সবচেয়ে সুরক্ষিত নিরাপদ স্থান। কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার বিমানবন্দরের বাস্তব চিত্র ঠিক তার বিপরীত। অরক্ষিত রানওয়ের কারণে বাড়ছে সীমাহীন নিরপাত্তা ঝুঁকি। রানওয়েতে অবাধে প্রবেশ করছে গ্রামবাসী এমনকি গরু-ছাগলসহ পশু-পাখি।
গত মঙ্গলবার কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ পাখার সাথে গরুর ধাক্কার ঘটনায় সর্বত্র তৈরি হয় বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো অরক্ষিত বিমানবন্দরটির রানওয়ে। সংস্কার করা হয়নি ভাঙা প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া। আগের মতোই ভাঙা দেয়াল দিয়ে লোকজন নুনিয়াছাটা ফিশারিঘাটের দিকে আসা-যাওয়া করছে।
ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৮ ক্রু ও ৯৪ জন যাত্রী নিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পাবার বিষয়টি সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। দেশের অন্যতম ব্যস্ততম কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এমন দৈব্য দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় উত্তর পাশের রানওয়েতে লোকজনের চলাচলসহ গবাদি পশুর বিচরণ সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
বিমানের ডানার ধাক্কা খেয়ে দুটি গরু মারা গেলেও একটুর জন্য বেঁচে যায় বিমানে থাকা ৮ ক্রু ও ৯৪ আরোহী। অথচ নেই কোনো জোরদার নিরাপত্তা কর্মী। যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে বিমানবন্দর সীমানা টপকে লোকজনের চলাচল, গবাদি পশুর ঘাস ও বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে গরু-ছাগল চরানোর অনুমতি মিলে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা ও কড়াকড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের প্রবেশমুখের চিত্র দেখতে ভাল লাগলে ও ভিতরটা একেবারেই শূন্য। উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট এমনই চিত্র কক্সবাজার বিমানবন্দরের। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে গরু-ছাগল দেখা গেছে। সেগুলো বের করে দেওয়ার কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় বিমানবন্দরের কাঁটা তারের বেড়া টপকে লোকজন চলাচল করছে। সীমানার ভেতর ঘাস খেতে বিচরণ করছে অর্ধশতাধিক গরু-ছাগল। অপর পাশে চলছে বিমানবন্দর সংস্কারের কাজ এবং দু’জন আনসার সদস্যের টহল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয়দের কাছে রানওয়ে হচ্ছে হাঁটাচলার ফুটপাত। এছাড়া তাদের হাটবাজারে যাওয়ার একমাত্র পথও এটি। বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ৪০০ ফুট খোলা। বিমানের যাত্রীরা জানান, রানওয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বন্দর স¤প্রসারণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে সিসিটিভি স্থাপনের দাবি জানান তারা।
এ সময় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, সীমানা প্রাচীর না থাকায় এবং তারের বেড়ার বেশ কয়েক জায়গায় ছিদ্র থাকায় মানুষ ও গরু-ছাগল বিমান বন্দরে ঢুকে পড়ে। চলাচলকারী মানুষদের নিষেধ করলেও তারা শুনেন না। উল্টো তারা মারতে আসেন বলে জানিয়েছেন আনসার সদস্যরা।
অপরদিকে চলাচলকারী স্থানীয়রা জানান, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে বিমান বন্দর অতিক্রম করে যাতায়াত করেন। আবার স্থানীয় অনেকের গবাদি পশু বিমান বন্দরের ভেতর বেঁধে দেন ঘাস খাওয়ার জন্য। কতিপয় আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মানুষ ও গবাদি পশু চলাচলের বিনিময়ে টাকা নেয়ার। এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপ নিতে যাওয়া এই বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হওয়া দরকার।
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তুজা ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি না হলেও জানান, অসম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু হয়েছে। রানওয়েতে গরুর সাথে বিমানের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় ৪ আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, বিমানবন্দর তদারকির জন্য বিমান বাহিনীর ২০ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিমানবন্দরে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুর হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মেম্বার সিকিউরিটি গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফি বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। তিনি আরো বলেন, আগে ছিল ছোট, এখন অনেক বড় ও দীর্ঘ হয়েছে রানওয়ে ও বিমানবন্দর। মাত্র ১২৯ জন আনসার ও ৩৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য রয়েছেন বিমানবন্দরের দায়িত্বে প্রয়োজনের তুলনায় আনসারের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার বিমান বন্দরে এই সময়ে দৈনিক ৪০টি বিমান উঠানামা করছে। ১৬৩ জন আনসার ও এপিবিএন সদস্য থাকা সত্তে¡ও বিমান উড্ডয়নকালীন সময়েও রানওয়েতে গরু ছাগল ও পথচারীদের বিচরণ উদ্বেগজনক।
অথচ, পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিত করার কাজ চলছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন সম্প্রসারিত রানওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
এক হাজার ৫শত ৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ থেকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে রর রানওয়ে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে দেশের চতুর্থ বৃহত্তর বিমানবন্দর। রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্যে ৩০০ ফুট রানওয়ে নির্মিত হচ্ছে সমুদ্রের উপর। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার দৃষ্টিনন্দন একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হবে। এটি দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক আকর্ষণে ভ‚মিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে সহগ্র বিদেশিদের নিয়মিত যাতায়াত কক্সবাজার বিমানবন্দরে। এর উপর প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এর যাতায়াত তো আছেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন