এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : দেশের সেরা ও বিশ্বের অন্যতম কেবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর আজ ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবার ৩৯তম বর্ষে পদার্পণ করল গৌরবময় প্রতিষ্ঠানটি।
কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত গুণগতমানের পণ্য উৎপাদন ও মানসম্মত গ্রাহক সেবা প্রদান করে এই কোম্পানি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে আজ বিআরবি গ্রুপের সৃষ্টি। এই গ্রুপে রয়েছে উৎপাদনশীল আরো বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ ও বিআরবি পলিমার লিঃ-এর মত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ সবের বাইরে সিকিউরিটিজ, এয়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, মানবসেবাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই গ্রুপের আওতায় সাফল্যের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। আর এগুলোতে প্রায় দশ হাজারের মত শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।
বিআরবি গ্রুপের কর্ণধার কুষ্টিয়ার কৃতিসন্তান, দেশবরেণ্য শিল্পপতি আলহাজ মো. মজিবর রহমান। তিনি কয়েকবার সিআইপি মনোনীত হয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ করদাতার সম্মান পেয়েছেন। চলতি বছরেও তিনি প্রেসিডেন্ট কর্তৃক শিল্পপদক ও জাতীয় রপ্তানিতে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় স্বর্ণ পদকে ভূষিত হয়েছেন। দেশ ও মানুষের জন্য মো. মজিবর রহমান কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উন্নত জীবনের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে মানুষকে কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। সব মিলিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের গৌরব বয়ে আনার অন্যতম দাবিদার বিআরবি গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা মো. মজিবর রহমান নিজেকে উৎসর্গিত করেছেন কাজের পেছনে।
কুষ্টিয়ার বিসিকে গড়ে ওঠা বিশাল শিল্পগোষ্ঠির প্রাণপুরুষ তিনি। কর্মজীবনে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা রয়েছে তার। তিনি পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে আজ নিজের এ অনন্য অবস্থান তৈরি করেছেন। কঠিন অধ্যবসায় ও সততার সাথে কোন চেষ্টা করলে তার ফলাফল অবশ্যই ভাল হয়, এর বাস্তব প্রমাণ তিনি।
শৈশব থেকেই পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজের মেধা বিকাশের হাতে খড়ি। তিনি যৌবনের আগেই দেশমাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই এতদসংক্রান্ত তহবিল গঠনের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ শেষে স্বাধীন দেশে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই মানুষের জন্য আরো বেশি কিছু করার জন্য উদগ্রীব থাকতেন।
এলাকার বেকার তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়ে তিনি শুরু করেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ১৯৭৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। নিজের সততা ও নিষ্ঠা এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রমে তিনি আজ সাফল্য পেয়েছেন। পণ্যের গুণগতমান ও গ্রাহক সেবায় আপস না করায় বিআরবি আজ দেশের সেরা ব্র্যান্ড। বিআরবি গ্রুপে চাকরি করতে পারা গৌরব ও সম্মানের বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সামাজিক সম্মানও অর্জিত হয়েছে।
দেশের সেরা এ প্রতিষ্ঠানের পণ্য আজ বিশ্বজুড়েও গুরুত্ব বহন করছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিআরবি গ্রুপ বিশ্বের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আজ বিশে^র বহুদেশেই বাংলাদেশ তথা কুষ্টিয়ার নাম সুনামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় বিআরবি গ্রুপের পণ্যের কারণে। পরম আস্থা ও নির্ভরতার সঙ্গে গ্রাহকরা বিআরবি গ্রুপের পণ্য ব্যবহার করছেন।
দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, শিল্পের প্রসার এবং সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি এই গ্রুপের প্রাণপুরুষ শিল্পপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মজিবর রহমান সব সময়ই মানুষের কল্যাণকে প্রাধান্য দেন। তিনি শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কাজের পাশাপাশি উন্নত চরিত্র গঠন ও পারিবারিক সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। সকল ধর্মের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তাঁর। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধের বিশ্বাসের আলোকে সকলকে নিজ নিজ ধর্ম মেনে চলার পরামর্শ দেন।
অফিসের কাজের বাইরেও এই গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা যে কোন বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য তার কাছে অবাধে যেতে পারেন। তিনি সব সময়ই সকলকে সুপরামর্শ প্রদান করেন।
বহু মানুষের কর্মসংস্থান, শিল্পোন্নয়ন ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে নিবেদিতপ্রাণ মোঃ মুজিবর রহমানের জীবনের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার আজ আর কিছু নেই। যৌবন পেরিয়েও তিনি নিরলসভাবে নিজেকে গতিশীল রেখেছেন শিল্পায়নের পথে। দিন রাত নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা ও সেখানে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় তিনি ক্লান্তিহীন। নিজের কারখানা দেখভাল করার বাইরে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন আরো বেশি বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের জন্য। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের শিল্পায়নকে সমৃদ্ধ করতে তিনি এখনও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সম্প্রতি কুষ্টিয়াতে বিআরবি গ্রুপের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এখানে হতদরিদ্র থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত রোগীদের সেবার সুযোগ থাকবে। ১৫তলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে অত্যাধুনিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হবে বলে জানা গেছে।
নিজের মেধা ও প্রচেষ্টায় শিল্প প্রসারে তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপতি হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কর্মবীর এই মানুষটি নির্লোভ, নিরহংকার ও সদালাপী এবং গরিব ও অসহায় মানুষের কাছে দানবীর হিসাবে পরিচিত। তিনি শিল্পায়নের পাশাপাশি সমাজ সেবায়ও উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে চলেছেন। প্রতিবছর তিনি শতাধিক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে নিজ ব্যয়ে হজ¦ব্রত পালনে পাঠিয়ে থাকেন।
বিআরবি কেবলস ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ-এর চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ পারভেজ রহমান, কনিষ্ঠপুত্র এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামসুর রহমান ও তার একমাত্র জামাতা কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজবার রহমান তার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এ শিল্প কর্মউদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
এদিকে ৩৮তম বার্ষিকী পূর্তি উপলক্ষে কুষ্টিয়া বিআরবি কেবলস-এর প্রধান কার্যালয়ে আজ ২৩ অক্টোবর রোববার সকল ৯টা থেকে দিনব্যাপী মিলাদ মাহফিল, আলোচনা, বিনোদন ও মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী অতিথিরা এতে উপস্থিত থাকবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন