৩১তম বিসিএসের এএসপি আনিসুল করিম শিপন। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বেলা ১১টায় আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালটির কর্মচারীদের মারধরে নির্মমভাবে মৃত্যু হয়েছিল তার। নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কিন্তু খোদ একজন পুলিশ কর্মকর্তার খুনের একবছরেও হয়নি চার্জশিট। রহস্যজনক কারণে অনেকটাই থমকে আছে হত্যা মামলার তদন্ত। নিহতের পরিবারের সদস্যরা বার বার সংশ্লিষ্ট্র কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও তদন্ত আর শেষ হচ্ছে না। ক্ষোভ আর হতাশা নিয়েই চলছে পরিবারের অপেক্ষা।
আনিসুল করিম শিপনের স্ত্রী শারমিন বলেন, গাড়ির শব্দ শুনলেই বাবাকে খুঁজে ফেরে হত্যাকা-ের শিকার এএসপি আনিসুল করিম শিপনের সাড়ে চার বছরের ছেলে সারফ্রান। তার মনে হয়, এই বুঝি বাবা এলো। কিন্তু বাবা যে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, এ কথা বোঝার বয়স হয়নি শিশুটির। ছোট্ট বাচ্চার এমন আবেগ-অনুভূতি সত্যিই খুব কষ্ট দিচ্ছে।
হতাশাগ্রস্ত শারমিন বলেন, এখন শুধু বিচার চাই। তার সঙ্গে যা হয়েছে তা তো আমরা সবাই দেখছি। আমরা বিচারের দিকে তাকিয়ে আছি। তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে; তারা বলছেন, অভিযোগপত্র দেবেন। তবে কবে দেবেন এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তদন্তে ধীরগতি কেন হচ্ছে, এ বিষয়টি বুঝতে পারছি না। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু চার্জশিট এখনও দেয়া হয়নি।
আনিসুল করিম শিপন হত্যাকা-ের অভিযোগপত্র দেওয়ার ধীরগতির পেছনে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিপনের বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) ফারুক মোল্লা বলেন, এসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলার চার্জশিট কিছুটা সময় লাগছে। সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ বাকি রয়েছে। এ কারণেই অভিযোগপত্র দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ১০ থেকে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হবে। করোনাকালীন সাক্ষীদের বাসা পরিবর্তন এবং ঠিকানা অনুযায়ী তাদের না পাওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয়।
তিনি আরো বলেন, অভিযোগপত্র দেয়ার জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্টও আমাদের হাতে এসেছে। মারধরের কারণেই এএসপি আনিসুল শিপনের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর হাসপাতালের কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি আঘাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় শিপনের বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় ১৫ জনকে। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন ১১ জন, মারা গেছেন একজন, জামিনে রয়েছেন একজন। ২জন পলাতক রয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন