প্রতি বছর শীতের মৌসুমে, অতিথি পাখিদের আনাগোনা দেখা যায়। জীবন বাঁচাতে এসব পাখি নানান দেশে অতিথি হয়ে থাকে। খাদ্য সংকট ও তীব্র শীতের কারনে নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে খাল-বিল হাওর অঞ্চলেও বসবাস করে এসব পাখি। বসবাসের সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ এসব পাখি শিকার করে। জীবের প্রতি দয়া করলে আল্লাহ খুশি হন। এমন কথা সবারই জানা আছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) শত্রুমিত্র ভেদাভেদ ভুলে অসহায় মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন। নবী (সা.)-এর দয়া ও দরদ থেকে বাদ পরেনি সাধারণ কীটপতঙ্গ, পশুপাখি, জীবজন্তু এমনকি বৃক্ষরাজিও। হাদিসে এ সবের প্রতি দয়া প্রদর্শনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। তন্মধ্যে এই বিখ্যাত ঘটনাটি তো সবারই জানা।
একদিন এক বালক পাখির বাসা থেকে দু’টি ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটা ছানার শোকে পাগলপ্রায় হয়ে ওই বালকটির মাথার উপর উড়াউড়ি করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বালকটিকে বললেন, ‘ছানা দু’টি বাসায় রেখে এসো। দেখছ না মা পাখিটি কেমন পাগল হয়ে তোমার মাথার ওপর উড়াউড়ি করছে, নিজের জীবনের মায়া পর্যন্ত নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথায় ওই বালক ছানা দু’টিকে পাখির বাসায় রেখে এলো। ছানা দু’টিকে পেয়ে মা পাখিটি বাচ্চা দু’টিকে অনেক আদর-সোহাগ করল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) খুব খশি হলেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা গৃহপালিত পশুর প্রতি খুব যত্নশীল হবে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেবে। তারা যাতে কষ্ট না পায় এমন থাকার ব্যবস্থা করবে। তারা যা বহন করতে পারে তার অতিরিক্ত কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। নবী (সা.) গর্তস্থ কীটপতঙ্গদের জীবন রক্ষার নিমিত্তে গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কারণ গর্তে পিঁপড়া ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ থাকে। তারা মারা যেতে পারে (কষ্ট পেতে পারে)। পশু-পাখির প্রতি এমন দয়া-মায়ার প্রেক্ষিতেই নবী (সা.)-কে শুধু মানুষের নবী না বলে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (বিশ্ববাসীর জন্য রহমত) অভিধায় ভূষিত করা হযেছে।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, দুনিয়ার বুকে যদি কোনো পশু অন্য পশুকে আঘাত করে আর আঘাতপ্রাপ্ত পশুটি প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ না পায় তাহলে দু’টো পশুকেই হাশরের ময়দানে উপস্থিত করানো হবে এবং অত্যাচারিত পশুটিকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। বাদ যাবে না অত্যাচারী মানুষেরাও। একবার ভাবুন, পশুরা প্রতিশোধ নিচ্ছে মানুষের ওপর, তখন কী ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে তা সহজেই বুঝা যায়। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি যদি কারো ওপর দয়া করো তাহলে তোমার ওপরও দয়া করা হবে। ’
উপরোল্লেখিত হাদিসসমূহের আলোকে বলা যায়, অসুস্থ পশুপাখির সেবা করা, তাদের আশ্রয় প্রদান করা, অভুক্ত পশু-পাখিকে খাওয়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। সুতরাং আশ্রয়প্রার্থী কোনো পাখীকে শিকার করে রসনাতৃপ্ত করা যে জঘন্যতম অপরাধ- এটা আর নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এভাবে পশু-পাখি শিকার, ভোজন, ক্রয়-বিক্রয় ইসলামের শিক্ষার বিপরিতও বটে।
বহির্বিশ্বে দেখা যায়; নির্ধারিত ভাবে পশুপাখিদের জন্য পানি ও খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন। অবুঝ প্রাণীদের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের। আল্লাহ পাক সকলের নেক আমলগুলো কবুল করেন, আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন