স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বাড্ডায় দুই শিশু সন্তানকে বিষপান করানোর পর তাদের মা নিজেও একইভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হলেও মারা যায় দেড় বছরের শিশু পুত্র আরিয়ান। আর শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪ বছরের কন্যা আগমনি ও সন্তানদের মা শাহানা বেগম (৩২)। পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর ওপর অভিমান করে সন্তানসহ ওই গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সন্তানদের বাবা আমজাদ হোসেন পলাতক।
বাড্ডা থানার এসআই বজলুর রহমান জানান, শনিবার রাত ১টার দিকে উত্তর বাড্ডার খান মসজিদ সংলগ্ন ৪৯/২, পাঁচ তলা ভবনের চার তলার একটি কক্ষ থেকে শাহানা বেগম (৩২), তার মেয়ে আগমনি (৪) ও দেড় বছরের ছেলে আরিয়ানের অচেতন দেহ উদ্ধার করা হয়। শাহানার স্বামী আমজাদ হোসেন গুলশানে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরি করেন। শনিবার মধ্যরাতে বাসায় ফিরে তিনি বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলে ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।
প্রতিবেশী মো. সেলিম জানান, স্ত্রী দরজা না খোলায় আমজাদ হোসেন আমাকে (সেলিম) ডাকেন। আমি বের হয়ে আসি। তখন বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। একই সময় ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে দরজা ভেঙে সবাই ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে গিয়ে দুই শিশু ও তাদের মাকে খাটের ওপর অচেতন অবস্থায় দেখতে পাই। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল নেয়া হয়। এ সময় দেড় বছরের শিশু আরিয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মা ও মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। আরিয়ানের মৃত্যু সংবাদ পাবার পরই তার বাবা আমজাদ হোসেন পালিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশু আগমনি ও তার মায়ের অবস্থাও গুরুতর। তাদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তাদের শরীরে বিষ্ক্রিয়ায় প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢামেক মর্গে শিশু আরিয়ানের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস শিশুটির ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন। প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, বিষক্রিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তারপরেও একেবারেই প্রকৃত ঘটনা নিশ্চিত হতে শিশুটির ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার পর জানা যাবে কী কারণে শিশুটি মারা গেছে।
বাড্ডা থানার ওসি আব্দুল জলিল বলেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে মা দুই সন্তানসহ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। শিশু দুটির বাবা ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে দরজা ভেঙে সকলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতেন না। যদিও পুত্র শিশুটি মারা যাবার পরই তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে অচেতন মা শাহানা বেগমের চেতনা ফিরলেই প্রকৃত রহস্য জানা যাবে। শাহানার স্বামী আমজাদ হোসেন গুলশানে একটি প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন। এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালে রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের আলমবাগ এলাকার একটি বাড়িতে থেকে ফারজানা কবির রিতা (৩৫), তার ছেলে কবির ইশরাক পাবন (১২) ও মেয়ে রাইসা রাশমিন পায়েল (১০)সহ তিন জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক কলহের কারণে বিষ জাতীয় কিছু খেয়ে মা তার দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এছাড়া চলতি বছরের গোড়ার দিকে কমলাপুরে এক মা তার দুই সন্তানসহ আগুনে আত্মাহুতির চেষ্টা করে। পরে এক পুত্র মারা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন