রাজধানীর অভিজাত ও কূটনৈতিক এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা। অভিজাত এ এলাকার লেকটি এখন ময়লা-আবর্জনার এক ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পয়োনিষ্কাশনের ময়লা, আবর্জনা ও নোংরা পানিতে কালচে বিবর্ণ হয়ে গেছে লেকের পানি। এই পানিতে এবার প্রচুর মাছ মরে ভেসে উঠেছে। ময়লা পানি ও পচা মাছের দুর্গন্ধে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দুর্বিষহ অবস্থা। লেকের পাড়ে যাদের বাসা তারা দরজা জানালা বন্ধ করেও থাকতে পারছেন না। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে অনেকে দিনে দুই তিনবার ঘরে এয়ারফ্রেসনার স্প্রে করছেন। তাতেও রেহাই পাচ্ছেন না। নোংরা ময়লা পানির উৎকট গন্ধের সাথে পচা মাছের গন্ধ মিলেমিশে এলাকার পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছে। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। শুধু পরিবেশদূষণই নয়, লেকের ময়লা আবর্জনাযুক্ত পচা পানি মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ময়লা পচা পানির দুর্গন্ধ আর মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারার লেক পাড়ের বাসিন্দারা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) লেকের দূষিত পানিতে মাছ চাষ না করার জন্য বলেছে। লেকে টানানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকে মাছ চাষ করা ও ধরা নিষেধ। লেকের মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সচেতনতামূলক এমন সাইনবোর্ড থাকার পরও এ লেকে চলছে মাছের চাষ। তবে কারা মাছ চাষ করছেন তা সিটি কর্পোরেশন জানে না। তাদের অগোচরেই চলছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এই কর্মকান্ড। তবে লেক পাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটিকর্পোরেশনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই লেকের এই অস্বাস্থ্যকর পচা পানিতে চলছে মাছ চাষ। মাঝে মাঝেই এ লেকের মাছ মরে ময়লা পানিতে ভেসে উঠে। তখন মাছ মরার গন্ধ লেকপাড়ের বাসিন্দারের জীবন দুর্বিষহ করে তুলে। তখন লেকের পাড়ে হাঁটাতো দূরের কথা, বাসাবাড়িতেও দরজা জানালা বন্ধ করে থাকলেও ভয়াবহ দুর্গন্ধ থেকে এলাকাবাসী রেহাই পান না।
গতকাল লেকের পাড় ঘুরে দেখা যায়, লেকের নানা জায়গায় বিভিন্ন সাইজের প্রচুর মরা পঙ্গাস মাছ ভেসে আছে। এসব মরা মাছের দুর্গন্ধে লেকের পাড় দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। কাজের প্রয়োজনে যারা লেকের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন তারা নাকে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে হাঁটছেন। বাড্ডা লিংক রোড থেকে গুলশান ১ নম্বরে যাচ্ছিলেন বোরহান মিয়া। তিনি বলেন, গত চার পাঁচদিন যাবত লেকে মাছ মরে ভেসে রয়েছে। মাছের পচা গন্ধে লেকের পাড় দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। এই এলাকার পরিবেশ একেবারে দুর্গন্ধে ভরে গেছে। অথচ এই মরা মাছ লেক থেকে সরানো হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, লেকে মাছ চাষ করা, মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অথচ এখানে চাষ হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই। সব ভোগান্তি শুধু আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।
মরা মাছের পাশাপাশি লেকের পানিতে ভাসছে প্রচুর ময়লা আবর্জনা। বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, সুয়ারেজ লাইনের মলমূত্র এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা গড়িয়ে পড়ছে লেকের পানিতে। ম্যানহোল হয়ে পয়োবর্জ্য পড়ছে। লেকটির বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের ফলে পানি প্রবাহের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই বদ্ধ পানিতে ময়লা-আবর্জনা পচে লেকের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলমান-বনানী-বারিধারা। ওই এলাকার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই লেকের দূষণ ও দখল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। লেকের পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে এর দুর্গন্ধ চারিদিকে বাতাসে ছড়িয়ে গোটা এলাকার পরিবেশকে দূষিত করছে। লেকের পানিতে মাছ চাষ ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে মাছ চাষ হচ্ছে। অথচ রাজউক এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বিভিন্ন লেকের দূষিত পানিতে যে মাছের চাষ হচ্ছে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। লেকের বিষাক্ত ময়লা আবর্জনায় মাছের শরীর বাড়ছে। ফলে এ মাছও বিষাক্ত হচ্ছে। এসব লেকের পানিতে ব্যাপকভাবে পলিথিন মিশছে। এসব পলিথিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাও মাছের পেটে যাচ্ছে। তাই এসব মাছ খেলে মানুষের শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
গুলশান ১ নম্বর এলাকার লকের পাড়ের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, লেকের ময়লা পানির দুর্গন্ধে বাসায় থাকা কষ্টকর। তার ওপর এই পানিতে মাঝে মধ্যে মাছ মরে ভেসে ওঠে। তখন পচা মাছের গন্ধে বাসায় থাকাটা দায় হয়ে পড়ে। বাতাসে এই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পুরো এলাকার পরিবেশকে দূষিত করছে। এতে আমরা যারা এই লেক পাড়ে বসবাস করি তারা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। অথচ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন