অপরাধ ছিলো হরিজন সম্প্রদায়ের হয়ে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের দিকে হাত বাড়ানো। এ অপরাধে মেয়ের জামাই তুষার দাস ওরফে রাজের বিরুদ্ধে ‘কন্যা অপহরণ’র মামলা করেন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথের মা। শাশুড়ির করা এ মামলায় বিচারিক আদালত শরীয়তপুরের তুষার দাস রাজকে ১৪ বছর কারাদন্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট তুষারকে বেকসুর খালাস দেন। গতকাল রোববার বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এবং বিচারপতি মো.আতোয়ার রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। তুষার দাসের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, হরিজন স¤প্রদাযের ছেলে হযে ব্রাহ্মণ স¤প্রদায়ের মেয়ে সুস্মিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তুষার দাস রাজ। এ ঘটনায় মেয়েকে ‘নাবালিকা’ দাবি করে রাজের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন তার শাশুড়ি। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি পান কারাগারে থাকা তুষার দাস। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট শাশুড়ির দায়ের করা অপহরণ মামলায় কারাগারে থাকা তুষার দাসকে জামিন দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে নিম্ন আদালতের দেয়া অর্থদন্ড স্থগিত করেন আদালত।
ওইদিন আদালত বলেছিলেন, আমাদের সমাজে এ রকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আইন তো ভিন্ন। একদিকে আইন একদিকে বাস্তবতা। আমাদের সমাজে উঁচু-নিচু জাতের একটা সমস্যা রয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বামী দলিত স¤প্রদায়ের হলে মেয়ের বাবা যদি মেনে নেয় তবে তার পরিবারিকভাবে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বাস্তবতাও ভাবতে হবে।
তুষার দাসকে নিম্ন আদালতের দেয়া ১৪ বছরের কারাদন্ড নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
তুষার ও সুস্মিতা ভালবেসে বিয়ে করেন প্রায় চার বছর আগে। তাদের সংসারে আছে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু তুষার দাস নিম্ন বর্ণের হওয়ার কারণে শুরুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার বাবা-মা। মেয়ে নাবালিকা এই অভিযোগ তুলে সুস্মিতার মা তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন। শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। সুস্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তার কথা আমলে না নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন