বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মান্যবর সভানেত্রী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় সমীপে সবিনয় নিবেদন
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অশেষ করুণা, তিনি আমাদেরকে ঈমানের দৌলত নসীব করেছেন এবং তাঁর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামের অনুসরণ ও আনুগত্যের তাওফীক দান করেছেন। তাঁর অপার অনুগ্রহেই আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ‘বাংলাদেশে’র গর্বিত নাগরিক হতে পেরেছি। তিনি আমাদেরকে শুধু ঈমান ও ইসলামের দৌলতই নসীব করেননি, কিয়ামত অবধি তা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম-উপকরণও প্রদান করেছেন। এ দেশের বুকে ইসলাম টিকিয়ে রাখার উদ্দেশে সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য সদা প্রস্তুত একদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী যেমন রয়েছে, দ্বীনের জন্য তপ্তপ্রাণ কর্মী উৎপাদন-কেন্দ্রও রয়েছে। হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও কওমী মাদরাসা এ দেশের জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ দান।
ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ ধর্মচর্চা ও ধর্মানুশীলনের দেশ। এ দেশীয় মানুষের ধর্মীয় অনুরাগ এবং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীলতা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। কুদরতীভাবেই বাংলাদেশ সুজলা, সুফলা এবং একই সাথে সুনাগরিক প্রসবাও। এ দেশের নাগরিকরা ধর্মকেন্দ্রিক বাড়াবাড়িকে যেমন প্রশ্রয় দেয় না, ধর্মের অবমাননাও তারা সহ্য করতে পারে না। ইসলামী বিধি-বিধান ও শিক্ষা-দীক্ষার ওপর যেকোনো আঘাত, আক্রমণ বা ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা বদ্ধপরিকর, এমনকি তা নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও। স্বীয় ধর্মের প্রতি আঘাত আসলে তাদের অন্তরে আঘাত লাগে, আপনিও এর ব্যতিক্রম নন। যা আপনি দৃঢ়কণ্ঠে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। আপনি শুধু একাধিকবার হজ ওমরাই পালন করেননি, এত দায়িত্ব ও ব্যস্ততা সত্ত্বেও কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের মতো কঠিন ইবাদতও পালন করে থাকেন। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করা হবে না’ ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী ইশতিহার। এসবই প্রমাণ করে যে, ধর্ম তথা ইসলামের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক কতটা গভীর ও সুদৃঢ়!
যে বাংলাদেশকে নিয়ে আজ আমাদের গর্ব, তার স্থপতি হলেন জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-যুদ্ধের প্রাণপুরুষ যেমন ছিলেন, একইসাথে তিনি ছিলেন ইসলাম ও ইসলাম শিক্ষা প্রচার ও সংরক্ষণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে’র সংস্থাপকও। ইসলামের কল্যাণে তাঁর অবদান এখানেই শেষ নয়, বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারকারী কাফেলা ‘তাবলীগী জামা‘আতের মারকাযের জন্য রাজধানীর অভিজাত এলাকা কাকরাইলে পর্যাপ্ত জমির বন্দোবস্ত দেয়া এবং তাবলীগী জামা’আত ও এই জামা’আতের ‘বিশ্বইজতিমা’র জন্য ঢাকার অদূরে তুরাগ নদীর তীরে ‘টঙ্গীর ময়দান’ বরাদ্দ দেয়াও তারই অবদান।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানী, তিনি ইসলামের সঠিক চেতনা ও যথার্থ শিক্ষা ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে ‘কওমী বা দেওবন্দী মাদরাসা’ নামে একটি চির-আপোষহীন বাতিঘর দান করেছেন। জন্মলগ্ন থেকেই এ শিক্ষাব্যবস্থা মানুষের মানসপটে মানবতার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে নিরবে নিসঙ্কোচে নিরবদ্যভাবে। মানবতার শিক্ষায় দীক্ষিত আদর্শ মানুষের শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে এ শিক্ষার বিকল্প নেই।
এ শিক্ষার ধারক নির্মোহ স্বেচ্ছাসেবী আলেমগণ খেয়ে থাকলে শুকরিয়া আদায় করা আর না-খেয়ে থাকলে ধৈর্য ধারণ করার নীতিতে বিশ্বাসী। ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার কল্যাণে নিয়োজিত থেকে কেউ কখনো কোনো কষ্ট-ক্লেশে নিপতিত হলেও তাঁদের নেই কোনো হা-হুতাশ বা অভিযোগ কারো কাছে কোনোকালে। উদ্দেশ্য কেবল একটাই, আল্লাহর আদেশ পালন করে মানব সমাজে মানবতার ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা। এ সবের কোনোকিছুই আপনার অজানা নয়। কওমী মাদরাসাগুলোতে কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে সবই আপনার নখদর্পণে।
এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, সময়, চাহিদা, পরিবেশ, পরিস্থিতি ইত্যাদির বিবেচনায় প্রত্যেক বিষয়েরই পরিমার্জন-পরিবর্ধন ও মানোন্নয়নের প্রয়োজন হতে পারে। কওমী মাদরাসাও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এ কথাও সর্বজন স্বীকৃত যে, তা হতে হয় বস্তুর লক্ষ্যের অনুকূলে, উদ্দেশ্যের সাথে সমন্বয় রেখে। একইসাথে তা হতে হয় বিষয়ানুরাগী ও বিষয়-বিশেষজ্ঞদের হাতে, যে কারো হাতে কোনোক্রমেই নয়।
কওমী মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও তা অর্জিত হওয়ার পথ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনি এবং এদেশের সচেতন জনতা অবশ্যই সবিশেষ অবগত। তা সত্ত্বেও সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার প্রয়াস ওই বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, যারা হয়তো না-বুঝেই বা বুঝার চেষ্টা না করেই কওমী মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার কথিত মানোন্নয়নের জিগির তুলেছে। সাথে বহুল প্রচলিত ও শ্রুতিমধুর কিছু সংশয়-নিরসনেরও চেষ্টা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে কওমী মাদরাসার মানোন্নয়ন কতটা প্রয়োজন, তার প্রক্রিয়া কী হওয়া উচিত এবং এর ধারক-বাহক উলামায়ে কেরাম এ ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ইত্যাদিও সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে শঙ্কার বিষয় হলো, কওমী মাদরাসার মানোন্নয়ন নিয়ে আজ যারা সরব, তারা কওমী মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও তা অর্জিত হওয়ার পথ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত বলে মনে হয় না। তাদের প্রস্তাব-পদক্ষেপ এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে। কওমী মাদরাসার মানোন্নয়ন সম্পর্কে তাদের প্রস্তাব-পদক্ষেপ শুধু গল্পের বুড়ি কর্তৃক শাহবাজ পাখির সেই কথিত মানোন্নয়নের কথাই মনে করিয়ে দেয়। যা শাহবাজ পাখিটিকে মৃত্যুমুখী রুগ্ন পাখিতে পরিণত করেছিল। কোনো বস্তুকে অকার্যকর করার প্রক্রিয়া কখনোই তার মানোন্নয়ন বলে বিবেচিত হতে পারে না।
সাহস ও প্রজ্ঞার সাথে জনহিতকর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আপনার দৃঢ়তার কল্যাণে আজ আপনি বিশ্ব নেতাদের প্রথম সারিতে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের স্বার্থরক্ষায় আপনাকে কখনোই আপস করতে দেখা যায়নি। আপনার চৌকস নেতৃত্বের কল্যাণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। এসব কিছুর সাথে একজন ইবাদতগুজার মুসলিম হওয়ার গৌরবও আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন। তাই ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার স্বার্থরক্ষায় ইসলাম ও কওমী মাদরাসার অপরিণামদর্শী বন্ধু বা দোস্তরূপী দুশমনদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, ইসলামপ্রিয় জনতা মনেপ্রাণে এটাই কামনা করে।
অতএব, আপনার সমীপে দেশবাসীর সবিনয় আবেদন এই যে, বহুমুখী ষড়যন্ত্রের শিকার কওমী মাদরাসাকে নিরাপদ রাখার জন্য আপনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। লক্ষ-উদ্দেশ্য সাধনের পথে কওমী মাদরাসার অগ্রযাত্রা নিশ্চিত ও নিরাপদ করুন। দোস্ত কিংবা দুশমন যে রূপেই হোক, মানোন্নয়ন কিংবা অন্য যে স্লোগানেই হোক ষড়যন্ত্রের হোতা বা ক্রীড়নক যেই হোক, কওমী মাদরাসার লক্ষ-উদ্দেশ্য অর্জিত হওয়ার পথ-প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী সব অপশক্তিকে প্রতিহত করুন।
আল্লাহ পাকের রহমত, নিষ্ঠাবান বুযুর্গ আলেমগণের দু‘আ, নিরীহ জনগণের শুভকামনা-সহ জল-স্থলের সকল মাখলূকের হিতাকাক্সক্ষা আপনার সাথেই থাকবে, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন, দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের কাক্সিক্ষত খিদমত করে মুক্তির পথ সুগম করার তাওফীক দিন, আমীন!
-মাদরাসা শিক্ষানুরাগীদের পক্ষে
শহীদুল্লাহ ইবনে এরশাদুল্লাহ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন