শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ত্রাণের বরাদ্দে সক্রিয় দালাল চক্র

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির
স্টাফ রিপোর্টার : টিআর, কাবিখা ও জিআরের বিশেষ বরাদ্দ, ব্রিজ, কালভার্ট, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের বরাদ্দ নিয়ে চলছে হরিলুট। আর এই হরিলুটের সুযোগ করে দিচ্ছেন খোদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকতারা। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে দালালদের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে সংসদীয় কমিটি। এসব দালালরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্ত্রী-এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্যাড সংগ্রহ করে তাতে প্রকল্পের নামে বরাদ্দ চেয়ে ডিও লেটার সংবলিত বিভিন্ন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র তৈরি করে বরাদ্দ ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে বানভাসি ও বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন। জাতীয় সংসদের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে দায়ীদের কর্মকতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও ত্রাণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদও দেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু বলেন, আমরা সরকারি কাজ করি না। এগুলো সরকারি কর্মকতারা দেখবে। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে চানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা অনেক সুপারিশ করেছি তার মধ্যে এগুলো ছিল।
এ বিষয়টি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, সংসদীয় কমিটি এ ধরনের সুপারিশ দিয়েছে কিনা তা জানা নাই। ত্রাণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপর বলব এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। সচিব বলেন, জনৈক সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশ নামে কর্মকর্তা আছে কিনা তা জানা নাই।
জানা গেছে, সারাদেশে টিআর-কাবিখার বিশেষ বরাদ্দকে কেন্দ্র করে একটি দালালচক্র গড়ে উঠেছে। আর এই দালালচক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশ। চক্রটির ১০-১২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেনÑ ইয়াহিয়া, মনির হোসেন, ইমরান, রুহুল আমিন, সাহেব আলী, পরিমল, আবু জাফর এবং বাবু প্রমুখ। তাদের প্রত্যেককে এলাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। দালালরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মন্ত্রী, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্যাড সংগ্রহ করে তাতে প্রকল্পের নামে বরাদ্দ চেয়ে ডিও লেটারসংবলিত বিভিন্ন ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্র তৈরি করেন। এরপর আবেদনপত্র পৌঁছে দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের কাছে। মন্ত্রীর মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে বরাদ্দের আদেশ বের করে নিয়ে আসতে এ সিন্ডিকেট বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরে আদেশ পৌঁছে দেয়া হয় দালালচক্রের কাছে। বরাদ্দের বিপরীতে সংগৃহীত কমিশনের টাকা জমা রাখেন সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশ। তিনি তা সংশ্লিষ্ট স্থানে বরাদ্দ দেন।
সংসদীয় কমিটিতে দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রায়ের কান্দি গ্রামের মুদি দোকানদার ছিলেন কর্মকতা দানকারী জনৈক সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশ। তার উত্থান রূপ কথাকেও হার মানায়। দালালী করে মাত্র দুই বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান তিনি। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ বরাদ্দের পাশাপাশি তিনি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে চাল-গমের বিশেষ বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার কাজ করেন। প্রতি টন বরাদ্দের জন্য তাকে দিতে হয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিশন। আর একটি ব্রিজ বরাদ্দের বিপরীতে দুই থেকে চার লাখ টাকা, কালভার্টে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ডিআরও) পদে বদলী বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে এসব দালালদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, দালালির টাকায় সুশান্ত কুমার ভৌমিক আকাশ এখন কোটিপতি বনে গেছেন। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ঋত্তিকা জুয়েলার্স নামে তার সুবিশাল জুয়েলারি দোকান আছে। এছাড়া গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই স্টোর, শিল্প কারখানা, স্বজন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্ড কোং, স্ত্রীর নামে প্রভাতী এন্ড কোং নামে পাঁচ-ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের করপোরেট অফিস বিজয় নগরের মাহতাব সেন্টারের নবম ও সপ্তম তলায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্ড কোং এবং প্রভাতী এন্ড কোংয়ের নামে দুই বছরে কেবল উত্তর মতলবে কমপক্ষে ৫০টি ব্রিজ বরাদ্দ নিয়েছেন আকাশ। নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে নামকাওয়াস্তে এসব ব্রিজের কাজ করে সিংহভাগ টাকা পকেটস্থ করেছেন। তদন্ত করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি ও দুদকের অভিযোগও দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন