শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘গঙ্গা ব্যারাজ’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের কারিগরি কমিটি ঢাকায়

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বহুল আলোচিত স্বপ্নের ‘গঙ্গা ব্যারাজ’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের কারিগরী কমিটি ঢাকায় এসেছে। আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দেশটির সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী (এইচএসও) মি. ভুপাল সিং গতকাল (সোমবার) রাতে ঢাকায় পৌঁছান।
আগামীকাল বুধবার প্রতিনিধি দলটি পাংসায় প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ এলাকা পরিদর্শন করবেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবণ পদ্মায় বৈঠক করবেন। শুক্রবার সকালে তারা কলকাতার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উভয় দেশের মধ্যে আলোচনায় গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যপারে ভারত যেসব বিষয় জানতে চেয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে-সেসব ব্যপারে ব্যাখা দেবে বাংলাদেশ। গত দুই বছরে এই প্রকল্প নিয়ে চার দফা চিঠি দিয়ে ১৯টি বিষয় জানতে চেয়েছে ভারত। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-গঙ্গা ব্যারাজের কারণে ভারতের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দেবে কীনা। ভারত মনে করে, বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ পানি আটকিয়ে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ছাড়লে যে ‘ব্যাক ফ্লো’ হবে-তাতে ভারতীয় অংশে ভাঙন দেখা দেবে।
ভারত আরও জানতে চেয়েছে, গঙ্গা ব্যারাজের কারণে পদ্মার ডান তীরে ভাটিতে জালেঙ্গি থেকে উজানে ধুলিয়ান পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় ভারতের সীমানা রয়েছে। সেখানে মাঝে মাঝে পদ্মার বুকে ভারতীয় অংশে চর রেেয়ছে। এসব চরাঞ্চলে বসতি গড়ে উঠেছে। ভারত জানতে চেয়েছে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব চর ডুবে যাবে কীনা এবং পদ্মার ডান তীরে ভারতীয় অংশ ভাঙনের কবলে পড়বে কীনা।
জানা যায়, ভারতের এসব অনুসন্ধানের জবাব বাংলাদেশ একাধিকবার চিঠির মাধ্যমে দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প ভারতের কোন ক্ষতি করবে না। আর পাংশা থেকে ব্যাক ফ্লো হয়ে ২০০ কিলোমিটার দূরে যেয়ে ভারতীয় অংশে ভাঙন ধরানোর কোন প্রশ্নই আসে না। বরং এই প্রকল্প থেকে ভারত লাভবান হবে। তাছাড়া জালেঙ্গি থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত যে সব পয়েন্টে ভারত ভাঙনের আশঙ্কা করেছে তা কোনভাবেই ভাঙবে না। আর ওই সব পয়েন্ট অনেক উঁচু। যেসব চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে-সেসব চরও অনেক উঁচু। শুষ্ক মৌসুমে পানির লেভেল এসব চরের অনেক নিচে থাকবে।
বরং গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে জালেঙ্গি থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত যেসব উচুঁ জায়গা রয়েছে সেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। ওই সব এলাকায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। গঙ্গা ব্যারাজ হলে এসব এলাকায় বসবাসকারি ভারতীয় নাগরিকরা অনেক সুবিধা ভোগ করবেন। যার মধ্যে ভেড়ামারা থেকে মাথাভাঙ্গা হয়ে গঙ্গার ফারাক্কার পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়বে। এই পানি ভারতের নাগরিকরাও সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারবে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আর নিচে নেমে যাবে না। তাছাড়া নদী সচল থাকায় মাছের উৎপাদনও বাড়বে। যাতে উভয় দেশ লাভবান হবে। কাজেই গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পটি যে ভারতের জন্য শঙ্কার নয়; এটি জোড়ালোভাবে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ণে উভয় দেশের কারিগরি কমিটির বৈঠকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠকে সফররত প্রতিনিধি দলটি আশ্বস্ত হলে তারা যে প্রতিবেদন ভারত সরকারের কাছে জমা দেবে-তার ওপরই নির্ভর করছে গঙ্গা ব্যরাজ প্রকল্পের ওপর থেকে ভারতের আপত্তি তুলে নেয়ার বিষয়টি। তবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা জানান, কারিগরি কমিটির যত প্রতিবেদই জমা দিক না কেন; পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যতই নির্ভর করছে ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।
গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে সাত বছর। ব্যারেজট নির্মাণ হলে গঙ্গা অববাহিকার ১৬টি নদী নাব্যতা ফিরে পাবে এবং বছর জুড়েই এসব নদীতে পানি থাকবে। এছাড়াও প্রতিবছর সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ফসল পাওয়া যাবে।
ভারত থেকে আসা প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন-পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইরিগেশন এন্ড ওয়াটারওয়েজ ডিপার্টমেন্টের সচিব নবীন প্রকাশ, মিনিস্ট্রি অব ওয়াটার রিসোর্চ এর কমিশনার (এফএম) জে. চন্দ্র শেখর আয়ার, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পরিচালক, হাইড্রোলজি মি. এনএন রাই, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পরিচালক মি. আরআর সামভিরা, ডব্লিউএপিসিওএস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অনুপম মিশ্র, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) নিনাদ এস দেশডান্ডে ও মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল এফয়ার্স এর আন্ডার সেক্রেটারি (বিএম) মিস. মিনি কুমাম। এই প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন থেকে আরও দু’জন যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, ভারতের সাথে গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল হাই বাকী।
এই প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন-পাউবো’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মাহফুজুর রহমান, যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ এর সদস্য জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গঙ্গা ব্যারাজ) মোতাহার হোসেন, পাউবো’র ফরিদপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী কবিবুর রহমান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন