তাহাজ্জুদ এর অর্থ হচ্ছে গভীর রাতের সালাত। তাহাজ্জুদের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহের অধিকাংশের ধারণা এমন যে, এটি কেবল রমযান মাসের বৈশিষ্ট্য। অথচ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ফরয নামাযের পরে সবচেয়ে মর্যাদাও গুরুত্ব বেশী দেওয়া হয়েছে তাহাজ্জুদকে। এটিকে বলা হয় নেককারদের পাঠশালা। তাহাজ্জুদ হচ্ছে মুমিনের অন্তরের প্রশান্তি। আমরা আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি তা পরিমাপের একটি মানদন্ড হতে পারে তাহাজ্জুদ। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, এই ব্যক্তির আচরণ সুন্দর, নাকি সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর। যে অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায়ও সাজদা করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে।
(সূরা আল যুমার : ৯)।
যারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে একান্তে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে চায়, তাদের জন্য রাতের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হে ছ তাহাজ্জুদ। জাবির ইবনু আবদিল্লাহ রা. বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, রাতের বেলা এমন একটি সময় আছে, যে সময় একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে উত্তম যা-ই চাইবে, আল্লাহ তাকে তা-ই দিবেন। (সহীহ মুসলিম: ১৮০৭)।
আল্লাহ তায়ালা কাউকে ভালোবাসেন কিনা, কিংবা কারো উপর সন্তুষ্ট কিনা, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে সে ব্যক্তি রাতের সালাত তথা তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারছে কিনা। যদি কোনো ব্যক্তি নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত থাকুন তিনি আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাবান। আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ কিছু বান্দাকেই এই তাহাজ্জুদের মাধ্যমে তার সান্নিধ্য পাবার সৌভাগ্য দান করেন। গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোটা এমন এক সম্মান, পাপীরা যা অর্জন করার যোগ্যতা রাখে না। বিখ্যাত তাবেয়ী সুফইয়ান সাওরী রহ. বলেন, আমার একটি পাপের কারণে আমি একটানা পাঁচ মাস তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারিনি। এক ব্যক্তি প্রখ্যাত হাসান বসরি রহ. এর কাছে এসে বলল, হে ভাই! আমার ঘুম ভালো হয়। কোনো দুশ্চিন্তা ও অসু¯ তা নেই। আমি প্রতিদিনই বিছানার পাশে পানি রেখে ঘুমাই। কিন্তু রাতে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য উঠতে পারি না। হাসান বসরি রহ. তাকে বললেন, তোমার পাপগুলো তোমাকে বেড়ি পরিয়ে রেখেছে। তোমার দিনের পাপ তোমাকে রাতে উঠতে দিে ছ না। আমরা সহজেই এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, দিনের পাপ একজন মুমিনকে রাতের সম্মানজনক তাহাজ্জুদ থেকে বঞ্চিত করে। তাই দিনের পাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং রাতের বেলা তাহাজ্জুদের সালাতকে জীবনের অবিে ছদ্য অংশে পরিণত করতে হবে। ইবনু উমর রা. বলেন, তাহাজ্জুদ ও জোরে তিলাওয়াত করা হলো প্রথম সারির ইবাদত।
যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য রাতে আল্লাহর সাথে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন জরুরুী। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) কে তাহাজ্জুদের আদেশ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, হে বস্ত্রাবৃত! কিছু সময় ব্যতীত রাত জেগে থাকো। রাতের অর্ধেক অথবা এরচেয়ে একটু কম। সূরা মুযাম্মিল, ১-৩ আয়াত। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা যেখানে রাসূল (সা.) কে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য আদেশ করেছেন, সেখানে সহজেই এর সম্মানও মর্যাদা বুঝা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন