শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রস্তাবিত ড্যাপ আবাসন শিল্প ধ্বংসের এক অশনিসঙ্কেত

প্রধানমন্ত্রী বরাবর রিহ্যাবের চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রস্তাবিত বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) ভবনের আয়তন নির্ধারণ নিয়মের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সংশোধিত ড্যাপে আবাসন শিল্প ধ্বংসের অশনিসঙ্কেত। এটি কার্যকর হলে দেশের আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। গত ৫ ডিসেম্বর আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো পত্রে এসব আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত¡াবধানে প্রণীত প্রস্তাবিত ড্যাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রিহ্যাবের লিখিত অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সরকারের ১০ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির একজন সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, ঢাকার ১৫ জন ও নারায়ণগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য, ১০ জন সিটি মেয়র ও একজন পৌর মেয়র এবং সরকারের চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রযোজ্য ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ নির্মাণযোগ্য ভবনসমূহে যে আয়তন পাওয়া যায়, সেটা বর্তমান সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য। তবে প্রস্তাবিত ড্যাপের আলোকে ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেটা কার্যকর হলে দেশের আবাসন খাতে সর্বনাশ ডেকে আনবে। রিহ্যাবের পর্যালোচনা মোতাবেক, কেন্দ্রীয় ঢাকায় ২০ ফুট সড়ক সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে আয়তন পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট। নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মোতাবেক আয়তন পাওয়া যাবে ৯ হাজার বর্গফুট। এখানে আয়তন কমবে ৩৩ শতাংশ বা চার হাজার ৫০০ বর্গফুট। আর ৩০ ফুট সড়ক সংলগ্ন ১০ কাঠা জমির আয়তন পাওয়া যাচ্ছে ৩৪ হাজার ২০০ বর্গফুট।
নতুন বিধিমালায় এর পরিমাণ হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ বর্গফুট। আয়তন কমবে ৩৭ শতাংশ বা ১২ হাজার ৬০০ বর্গফুট। ৪০ ফুট সড়ক সংলগ্ন ২০ কাঠা জমিতে বর্তমানে আয়তন মিলছে ৭৯ হাজার ২০০ বর্গফুট। নতুন বিধিমালায় এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ৪০০ বর্গফুট। আয়তন হ্রাস পাবে ৩৬ শতাংশ বা ২৮ হাজার ৮০০ বর্গফুট। এ ছাড়া ৮০ ফুট সড়ক সংলগ্ন ২০ কাঠা জমির বর্তমান আয়তন ৯৩ হাজার ৬০০ বর্গফুট। নতুন বিধিমালায় পাওয়া যাবে ৫৭ হাজার ৬০০ বর্গফুট। কমবে প্রায় ৩৯ শতাংশ বা তিন হাজার ৬০০ বর্গফুট। একইভাবে বহিস্থ নগরে ৪৩ ভাগ এবং অন্যান্য নগরে ৫৩ ভাগ আয়তন কমবে। একইভাবে বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক আয়তন হ্রাস পাবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজউকের প্রস্তাবিত ড্যাপ চ‚ড়ান্ত হলে ফ্ল্যাটের দাম ৫০ ভাগ বাড়বে। এটা কার্যকর হলে ফ্ল্যাট ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এ ছাড়া আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি লিংকেজ শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত ৪০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এ ছাড়া জমির মূল্যও কমে যাবে। যাদের এ শহরে নূন্যতম পরিমাণ জমিও রয়েছে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার সম্পদের পরিমাণ ও মূল্য হ্রাস পাবে। যেটা সরকারের ঢাকা অঞ্চলের ভোট ব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকা শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হবে ৫০ লাখ মানুষ। যেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ড্যাপের এ ধরনের বিধানাবলিসহ এ মাস্টার প্ল্যান চ‚ড়ান্ত হলে কৃষি, ফসলি ও জলাধার ভরাট করে ভবন নির্মাণের পরিমাণ বাড়বে। যেটা দেশের খাদ্য সঙ্কটের কারণও হতে পারে।
রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, রাজউকের প্রস্তাবিত ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আবাসন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা আবাসন খাত ধ্বংসের নীলনকশা বলে মনে করছি। রাজউককে বাস্তবসম্মত ড্যাপ বাস্তবায়নের আহবান জানাব।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত ড্যাপের ভবনের আয়তন নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছেন। সেটা যৌক্তিক পর্যায়ে সমাধানের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে কার্যক্রম চলছে। আশা করছি, এটার একটা যৌক্তিক সমাধান মিলবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ড্যাপ কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে এত আয়োজন। এখানে রাজউক বা পরিকল্পনাবিদদের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমরা সবাই মিলে ঢাকা বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করব। এজন্য সব পেশাজীবী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এসব আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবায়নযোগ্য ড্যাপ উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। তবে ঢাকা থেকে ৫০ লাখ লোককে সরে যেতে হবে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, এটার কোনো ভিত্তি নেই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন