শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থবছরে আমাদের বাজেটের আকার যেটা রয়েছে সেখানে আমাদের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আমরা বিশ্বাস করি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করতে পারব। আপনারা জানেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সব সময় এ বিষয়ে একটু অন্যরকম। তবে ভালো খবর হলো আমরা ৭ দশমিক ২ অর্জন করতে পারব। আমরা যদি কাছাকাছি সময় দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই প্রতিটা খাতেই আমাদের প্রবৃদ্ধি আছে। ভালোভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি। আমাদের এক্সপোর্টও বেড়েছে। এক্সপোর্টে যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি হয়েছে।

গতকাল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সভায় পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জনশুমারি প্রকল্প ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে তৈরি করা জিনিস আমরা ব্যবহার করতে চাই। সেজন্য আমরা সময় বেশি নিচ্ছি। কারণ মেড-ইন-বাংলাদেশ ইজ অ্য কনসেপ্ট, ইজ অ্য ফিলোসফি। আপনাকে বুঝতে হবে আগামী ৫০ বছরকে সামনে রেখে আমরা কিন্তু এ ধরনের ফিলোসফি ধারণ করছি। আমরা ইম্পোর্ট করে আনলে সহজেই করা যায়। কিন্তু আমরা ইম্পোর্টেড প্রোডাক্ট দেখতে চাই না। আমাদের দেশে যারা সক্ষম এগুলো তৈরির জন্য তাদের সুযোগ দিতে হবে। সে জন্যই সময় বেশি লাগছে। যাতে ভুল ভ্রান্তি না হয় সেটি দেখা। দেশীয় কোম্পানিকেই দিতে চাচ্ছি। আমরা চাই যেসব জিনিস দেশে তৈরি হয় সেগুলো আমরা বিদেশ থেকে কম ব্যবহার করবো। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। আমরা দেখতে চাই আমরা কোন জায়গায় পৌঁছাতে পারি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিভিন্ন দেশে রোড শো করার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রোড শো’র আউটকাম তো আছেই। রোড শো করার সঙ্গে সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ হয় বলে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি রোড শো’র একটি কার্যকারিতা আছে। সারাবিশ্বের মানুষের আগে যে ধারণা ছিল সেটি এখন থাকবে না। এখনো বিশ্বের মানুষ মনে করে আমাদের যে অগ্রগতি, অর্জন এটা বিস্ময়ের বিষয়। এটা বিস্ময়ের বিষয় নয়, বাস্তবতা। আমি মনে করি আমরা ঠিক জায়গায় আছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ খাতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হলেও বর্তমানে রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়ে) আমরা একটু পিছিয়ে আছি। রেমিট্যান্স এখন যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে এগোলে ২১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আমরা আশা করতে পারি। কিন্তু আমাদের সামনে দুটি ঈদ রয়ে গেছে। ঈদের সময় রেমিট্যান্স বেশি আসে, সেটা বাদ দিয়েই কিন্তু আমরা ২১ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাশা করছি। যেই রেমিট্যান্স আমরা প্রত্যাশা করছি সেটি যদি পেয়ে যাই তাহলে এ বছর আমরা আশা করি ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারবো।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রত্যেকটা খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি এগিয়ে আছে, আমরা যথাযথ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছি। আমাদের রফতানি বেড়েছে, আমরা যে পরিমাণ আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। নভেম্বরে এক মাসে আমাদের ৩১ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। গত ৫ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমদানি-রফতানি ভালো। এটা যেভাবে এগোচ্ছে, আমরা বিশ্বাস করি এ বছর আমাদের ৪৭-৪৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি হবে। এর মাধ্যমে নতুন একটি মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছি আমরা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত ৫০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে এটা আমি স্বীকার করি। এ অর্জন একইভাবে হয়েছে তা নয়। আপনারা জানেন আমাদের প্রথম ১০০ বিলিয়ন ডলার জিডিপি অর্জন করতে লেগেছিলে ৩৮ বছর। ৫০ বছরের মধ্যে ৩৮ বছর বাদ দিলে থাকে ১২ বছর। অধিকাংশ অর্জনই হয়েছে এই ১২ বছরে। ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের সব অর্জন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তার নেতৃত্বে এবং সুচিন্তিত মতামতে আমাদের অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি আগামীতে আমরা আরও ভালো কিছু অর্জন করতে পারবো। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বিশ্বের কাতারে আমাদের শামিল করবো।
সভায় আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সউদী আবর ও সিঙ্গাপুর থেকে ২৮ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন বছরের জন্য এ তেল আমদানিতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৪১তম সভায় ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন খাত (জিওবি) হতে ব্যয় হবে আট হাজার ১০৭ কোটি ৭৯ লাখ চার হাজার ৪৫৯ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক, এডিবি, আইটিএফসি ও জাইকা হতে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে আট হাজার ৫১৩ কোটি আট লাখ ৯১ হাজার ১৩৯ টাকা।

সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, আজ মোট ১৩টি প্রস্তাব আনা হয়েছিলো। এছাড়া টেবিলে আরও তিনটি প্রস্তাবসহ মোট ১৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জনশুমারির প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয়া হয়। সভায় মোট ১৫টি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব জানান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) ২০২২ সালে এডিএনওসি, আবুধাবি এবং সউদী আরবের সউদী এ্যারামকো থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) সাত হাজার ৪৬৭ কোটি ছয় লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া বিপিসিকে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য সিঙ্গাপুরের প্যাকেজ-এ’তে পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল, প্যাকেজ-বি, ডি ও ই’তে ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড এবং প্যাকেজ-সি’তে সিঙ্গাপুরের ভিটো এশিয়া পিটিই লিমিটেড থেকে মোট ১২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সাত হাজার ৬২৭ কোটি চার লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন খুলনা ওয়াসার ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং এসএন-২ এর আওতায় নির্মাণকাজ চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কাছ থেকে ৮৩০ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬১ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স¤প্রসারণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ভেরিয়েশন বাবদ ২০০ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ২০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাপানের (১) নিপ্পন কিউও. কোং.লিমিটেড, (২) ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গেøাবাল কোং লিমিটেড; সিঙ্গাপুরের (৩) সিপিজি কনসালট্যান্ট পিটিই. লিমিটেড এবং বাংলাদেশের (৪) ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো খাগড়াছড়ি জেলার জন্য ‘প্রোগ্রেসিভ’ শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ২২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় এবং রাঙামাটি জেলার জন্য ‘আশ্রয় অঙ্গন’ শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৫৫ লাখ ৩ হাজার টাকায় ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট এজেন্সি (আইএসএ) হিসেবে উল্লিখিত দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সভায় ২০ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ২৪৩ টাকা ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্সের জন্য আবাসিক অ্যাপ্লায়েন্সেস, ফার্নিচার, পর্দা এবং আনুষঙ্গিক ফিটিংস ক্রয়ে পৃথক তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ (যাত্রীবাহী বগি) সংগ্রহ প্রকল্পের ১৪ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৭ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে দুটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ এবং ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-১ এর ভেরিয়েশন বাবদ ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-২ এর ভেরিয়েশন বাবদ চার কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করছে ইন্দোনেশিয়ার এম/এস পিটি ইন্ডাস্ট্রি কেরাটা এপিআই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন