স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে তিস্তাসহ অভিন্ন ৫২ নদীর পানি বণ্টনে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে দিল্লিকে জোরালোভাবে কেন ঢাকা চাপ দিচ্ছে না তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু। ভারতের প্রবীণ এই নেতা তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের টালবাহানা এবং বাংলাদেশ সরকারের নীরবতায় প্রশ্ন রাখেন তিস্তার পানির জন্য ঢাকা কেন দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে না সেটাই আমার প্রশ্ন। তিনি বলেছেন, বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণ। দু’দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার উচিত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে দিল্লিকে চাপ দেয়া এবং দ্রুত এসব চুক্তি করে ফেলা। গত রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগদানের জন্য ঢাকায় আসেন। জ্যোতি বসুর বিদায়ের পর তিনিই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে যে ফারাক্কার পানি চুক্তি হয় তার নেপথ্যে ছিলেন জ্যোতি বসু। সেই জ্যোতি বসুর সহযোগী প্রবীণ এই নেতা ঢাকার সাংবাদিকদের সামনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে রাজনীতি না করে এ চুক্তিতে মত দেয়া উচিত। বাম আমলে জ্যোতি বসু গঙ্গার পানির ভাগ করার জন্য তো বিরোধিতা না করে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনবিঘা চুক্তিতে সমর্থন করেছিলেন। আর তিনি (মমতা ব্যানার্জি) এত অনুরোধেও কেন যে এ চুক্তিতে সায় দিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিস্তার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক খারাপের জন্য শুধুমাত্র মমতা দায়ী। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক ভালো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিমান বসু আরো বলেন, ‘দু’দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্কের কারণেই তিস্তাসহ দু’দেশের সাধারণ নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত, বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হবে। জমি নিয়ে বিতর্কের যখন নিষ্পত্তি হয়েছে, তখন আমি নিশ্চিত পানির বিষয়টিরও সমাধান হবে।’
প্রসঙ্গত, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি আটকে আছে। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার বাংলাদেশের বিরোধী নয়, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দু’দেশের চুক্তির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাজ্যের স্বার্থ বিবেচনা করে তবেই এ ব্যাপারে এগোনো হবে। সেই ঘটনার এক বছরের মাথায় আবারও তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তার আগেও কংগ্রেসের শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তির প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে চুক্তি হয়নি। তিস্তার পানির অভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। ডালিয়ার উজানে গজলডোবায় অবৈধভাবে বাঁধ দেয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানির অভাবে মরুভূমি হওয়ার পথে। প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। তারপরও দিল্লি অখুশি হবে এ শঙ্কায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে তিস্তার পানি ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে ভারতের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও সিনিয়র সাংবাদিক ঢাকা সফরে এসে এক সেমিনারে বিমান বসুর মতো তিস্তার পানি ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে ঢাকা কেন নীরব সে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন