অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গেল অর্থ-বছরে রেকর্ড অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থ-বছরে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর আগের হিসাবের চেয়ে বেশি।
নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছিল, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। এদিকে, গেল অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল বাংলাদেশ। গত অর্থ-বছরের শুরুতে বাজেট ঘোষণার সময় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।
তবে নয় মাসে অর্থনীতির গতি প্রকৃতি দেখে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্ব ব্যাংক বলেছিল, এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রাক্কলনে লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ার চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মাথাপিছু আয় হয়েছে প্রাক্কলন থেকে এক ডলার কম, অর্থাৎ ১ হাজার ৪৬৫ ডলার।
মন্ত্রী বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বদলে যাওয়ায় গত মে মাসের প্রাক্কলনের সময় থেকে চূড়ান্ত হিসাবের মাথাপিছু আয় কমেছে। গত মে মাসে প্রতি ডলারের বিনিময়ে যেখানে ৭৮ টাকা ১৫ পয়সা পাওয়া যেত, চূড়ান্ত হিসাবের সময় তা হয় ৭৮ টাকা ২৭ পয়সা।
চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা বা ২২১ বিলিয়ন ডলার। বিবিএস এর প্রাক্কলনে চলতি অর্থবছর জিডিপির আকার ১৭ লাখ ২৯ হাজার কেটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলা হয়েছিল।
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৯ হাজার ৪৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা ও সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. শামসুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সব প্রকল্পই সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক বছর আগেও বিশ্ব অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবস্থান আজ ৪৩তম। ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার দিক থেকে ৩৩তম। দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল ¯্রােতে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টির ওপর প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতার জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হচ্ছে- মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ (যশোর- প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারা বাজার সড়কের ছাতকে সুরমা নদীর ওপর সেতুর অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। জামালপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
দেশের তিনটি উপকূলীয় জেলার চারটি স্থানে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন থেকে হাজী শরীয়তউল্লাহ সেতু সংলগ্ন ঢাকা-মাওয়া-ভাংগা-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। রাজৈর-কোটালীপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। একটি বাড়ি একটি খামার (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ হাজার ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন