বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরস শরীফ শুরু

প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বিশ্বব্যাপী সাম্য, শান্তি ও ঐক্যের বারতা ছড়িয়ে হযরত শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের বিশ্ব উরস শরীফ শুক্রবার বাদ মাগরিব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সৃষ্টির নিগূঢ় তত্ত্ব অনুধাবন, পরম আরাধ্য আল্লাহতায়ালার নৈকট্য সন্ধান আর মঞ্জিলে মাকসুদে পৌঁছানোর অবিরাম যাত্রায় আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের ভূষণে সজ্জিত হওয়ার শিক্ষাই গ্রহণ করবেন সমবেত বিশ্বাসীগণ। আগামী মঙ্গলবার সকাল নাড়ে ১১টায় বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের পবিত্র রওজা শরীফ যিয়ারত ও আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল জুমা নামাজে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে কয়েক লাখ মুসল্লী নামাজ আদায় করেন।
এদিকে, বিশ্ব উরস শরীফে যোগদানে দেশ বিদেশ থেকে শান্তিকামী মানুষের অবিরাম কাফেলা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকেই। যা ছিল নজিরবিহীন। সড়ক ও নৌ-পথে এখন হাজার হাজার বাস, মাইক্রোবাস, লঞ্চ, ট্রলার ও অন্যান্য বাহনের অবিরাম কাফেলা। মূল ভেন্যুর সকল প্রবেশ পথে শুধু মানুষ আর মানুষ। লাখ লাখ নারী,পুরুষ, শিশু, কিশোর, তরুণ,তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। পথে পথে এলাকাবাসী পানি, খেজুর ও আখের রস, সরবত, ডাবের পানি, ফিরনীসহ নানা খাদ্যদ্রব্য সহকারে খোদা অন্বেষী মেহমানদের হাসিমুখে স্বাগত জানাচ্ছেন।
পীরজাদা আলহাজ খাজা মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেব ও পীরজাদা আলহাজ খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ছাহেব সুবিশাল এ জামাতে নামাজ আদায় করেন। খোদা অন্বেষী কয়েক লাখ শান্তিকামী মুসলমান জামাতে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফযর ৭ দশকের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী রওজা শরীফ কমপ্লেক্সে স্থাপিত সুউচ্চ টাওয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহু আকবার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
৪ দিনে ওয়াক্তিয়া নামাজের সাথে নফল ইবাদত বন্দেগী, তেলাওয়াতে কালামে পাক, দফায় দফায় মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মুনাজাত, মোরাকাবা মোশাহেদা, জেকের আসকার, সকল সৃষ্টির মূল বিশ্ব নবী রাসুলে পাক (সা:) এর প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া এবং তদীয় আদর্শের আলোকে বিশ্বব্যাপী স্নিগ্ধ, সুরভিত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় জীবন সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের সাধনা সর্বোপরি প্রকৃত ইসলামের মহাশ্বাশত রুপ আলোকপাত করে নানামুখী বয়ান অব্যাহত থাকবে। বিশ্বওলী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিদ্বয় সমবেতদের দফায় দফায় সাক্ষাৎ ও বিশেষ নসিহত দান করবেন।
আর শান্তিকামী মানবতার বিশ^ মহামিলনমেলা উপলক্ষ্যে নান্দনিক সাজে সেজেছে বিশ^জাকের মঞ্জিল। সুবিশাল অসংখ্য প্যান্ডেল, সামিয়ানা, পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পবিত্র উদ্ধৃতি উতকীর্ণ সুদৃশ্য অসংখ্য ফলক, আলোকমালা সজ্জিত তোরণ, বিন্দু বিন্দু সফেদ লাখো এলইডি বাতিতে সুবিশাল জামে মসজিদ এবং সুউচ্চ ৪ মিনার অত্যন্ত মনোরম ও নয়নাভিরাম সাজে সাজানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বরাবরের ন্যায় হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ নানা সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ মানুষ এ মহামিলনমেলায় সমবেত হবেন। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য অক্ষুণœ রেখে তাদের জন্য সুসমন্বিত বিন্যাস অনুযায়ী আলাদা আলাদা বিশাল কমপাউন্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
এবাদত বন্দেগী, আহার, বিশ্রাম, চিকিৎসা সেবা, গাড়ী পার্কিং, অগ্নিনির্বাপণ, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সুবিধাসহ সার্বিক আয়োজনে ৫৮টি ডিপার্টমেন্টে ২ লক্ষাধিক কর্মী একযোগে কাজ করছে। ভাত, গোশত ও ডাল রান্নার পৃথক পৃথক বিশাল বিশাল পাকশালায় বিরতিহীন রান্না চলছে, বিশাল বিশাল খাবার মাঠে উপচে পড়া ভীড়- যেখানে ২ লক্ষাধিক মুসল্লি একসাথে বসে খাবার খেতে পারছেন। সে সাথে ওজু ও পয়ঃপ্রনালীর জন্য পর্যাপ্ত পানি, ৪ হাজার টয়লেট এবং স্থানীয়দের উদ্যোগে আরো ৬ হাজার টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
নিñিদ্র নিরাপত্তায় ৫ শতাধিক সিসি টিভি ক্যামেরা, ৪৬ টি আর্চওয়ে গেট, সহস্রাধিক হ্যান্ড হেল্ড ম্যাটাল ডিটেক্টর, ওয়াকিটকি, ৬৩টি সুউচ্চ অবজারভেশন পোষ্ট, ২ হাজার সার্চলাইট এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণে দমকল ইউনিটও মোতায়েন রাখা হয়েছে। ৩২টি সুবিশাল কার পার্কিং এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কয়েক হাজার কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। হরিনাঘাট, কাওরাকন্দি, বলাশিয়া, চন্দ্রপাড়াসহ ৫টি নৌবন্দরে নৌপথে আগত মানুষের জন্য স্থাপিত ক্যাম্পসমূহ এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-কাওরাকান্দি ফেরিঘাটে স্থাপিত ক্যাম্পসমূহে বিপুলসংখ্যক কর্মী কাজ করছেন আগতদের সহায়তায়। এছাড়া হেলিকপ্টার ওঠা-নামার জন্য হেলিপ্যাডও রাখা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ৫০০ কিলোওয়াটের ১০টি জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। আর ২ সহস্রাধিক লাউড স্পীকার ও সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে চলছে এবাদত বন্দেগী, ওয়াজ নসিহতের কাজ। জরুরী চিকিৎসা সেবা সুনিশ্চিতে হাসপাতাল, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ইউনিট ও এম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। এছাড়া মিডিয়া সেন্টার ও বিপুলসংখ্যক বুক স্টল রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন