বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ইসলাম

মুহাম্মদ কামাল হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মাদকদ্রব্যের আরবী প্রতিশব্দ ‘খমর’। এর অর্থ- সমাচ্ছন্ন করা, ঢেকে দেয়া। এই সকল শাব্দিক অর্থের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই মদ ও শরাবকে ‘খমর’ বলা হয়। ঈধসনৎরফমব উরপঃরড়হধৎু-তে বলা হয়েছে, অহ ধষপড়যড়ষরপ ফৎরহশ যিরপয রং ঁংঁধষষু সধফব ভৎড়স মৎধঢ়বং নঁঃ পধহ ধষংড় নব সধফব ভৎড়স ড়ঃযবৎ ভৎঁরঃং ড়ৎ ভষড়বিৎং. ওঃ রং সধফব নু ঋঊজগঊঘঞওঘএ, ঃযব ভৎঁরঃ রিঃয ধিঃবৎ ধহফ ংঁমধৎ. ‘মদ হল নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয়। তবে অন্যান্য ফল ও ফুল থেকেও তৈরী হতে পারে। এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি ও পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয়’।
পারিভাষিক অর্থ : ‘যে সকল বস্ত্ত সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে মাদকদ্রব্য বলে। কবি বলেন, ‘মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে। মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে’। সাধারণত নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করা বা পান করাই মাদকাসক্তি।
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী : ‘মদ বা মাদকদ্রব্য তাই, যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে’।মাদকের ভয়াবহতা খুবই বেশি। একটি পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রকে ক্রমশ ওলটপালট ও লন্ডভন্ড করে দেয়। একমাত্র ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে কতটা অসহনীয় যন্ত্রণা তাদেরকে প্রতিটি মুহূর্তে সহ্য করতে হয়। বর্তমান সময়ের মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে মাদক অন্যতম একটি। বিশেষতঃ যুব সমাজের জন্য মাদক ও মাদকাসক্তি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এর বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য সম্ভাবনাময় জীবন। সমাজের যাবতীয় পাপাচার, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার অধিকাংশের মূলেই রয়েছে এই মাদক ও মাদকাসক্তি। ইসলাম এই মাদক ও মাদকাসক্তির ব্যপারে সুনির্দিষ্ট সমাধান ও পালণীয় নীতিমালঅ প্রদান করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ (ভাগ্য-নির্ধারক শর বলতে আরবে প্রচলিত এক ধরনের জুয়া বোঝানো হয়েছে) এসব শয়তানের কাজ বৈ অন্য কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে দূরে থাক; যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। [সুরা মায়িদা-৯০] পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে মাদক ও সংশ্লিষ্ঠ সবকিছুকে শয়তানের জঘন্য কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এও বলা হয়েছে যে, মাদক মানুষের মাঝে শত্রুতা ছড়িয়ে দেয়।
বর্ণিত আয়াতে মাদকের আরেকটি ভয়াবহ পরিণতির কথা বলা হয়েছে, মাদক মানুষকে মহান আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর যখন কোনো মানুষ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহবিমুখ হয়ে যায়, তখন তার মাঝে নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছু আর অবশিষ্ট থাকে না। হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, সকল নেশা জাতীয় দ্রব্যই খমর তথা মদের অন্তর্ভুক্ত। আর সব ধরনের মাদকই হারাম। [মুসলিম] আবদুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ মদ পান করে, আল্লাহ তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করেন না। আর যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে; তবে সে জাহান্নামি হবে। কিন্তু যদি সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এরপর যদি দ্বিতীয় বার মাদক গ্রহণ করে তাহলে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল হবে না। তবে যদি দ্বিতীয় বার তওবা করে,আল্লাহ তওবা কবুল করবেন। এরূপ যদি চতুর্থ বার সে পুনরায় মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার ওপর হক হয়ে যায় যে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, মদ সব অশ্লীলতার মূল ও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
এও বলা হয়েছে যে ব্যক্তি মদ পান করল সে যেন আপন মা, খালা ও ফুফুর সঙ্গে অপকর্মে লিপ্ত হলো। [তবরানি]। মদের কুফল বর্ণনার ব্যাপারে এর চেয়ে মারাত্মক কথা আর কী হতে পারে! মাদক হলো বহু গুরুতর অপরাধের জননী। সর্বনাশা মাদকের কারণে মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাচ্ছে, জাতি মেধাশূন্য হচ্ছে। মাদক কেনার অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়েই কিশোর-তরুণরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। দেশের প্রতিদিনকার দৈনিকগুলোর পাতা খুললেই দেখা যায় মাদক কতো বড় অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে। ভৌগোলিকভাবে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের কারণে আমাদের দেশে নানাভাবে নানাপথে বানের জলের মতো মাদক প্রবেশ করে থাকে। যার সিংহভাগ আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। অত্যন্ত লাভজনক এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র। শক্তিশালী এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের মতো দেশের পক্ষে সম্ভব না। আইন ও সরকারও এদের প্রভাবের কাছে নতজানু। সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তাদের অর্জন যে কিছু একটা হয়েছে তা মনে হয় না। তাই মাদকের অভিশাপ থেকে দেশকে বাঁচাতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সামাজিকভাবে প্রতিরোধই পারে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে মাদককে না বলার মতো শক্ত ভিত সৃষ্টি করতে। সারাদেশের মাদকের সম্মিলিত চিত্র তৈরি করলে আগ্রাসনের যে ভয়াবহতা প্রকাশ হবে তা চিন্তুা করতেই সাহস হবে না। সাধারণ মানুষের ধারণা মাদকের সর্বগ্রাসী রূপ আরো ব্যাপক। কারণ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগা দিয়েই সিংহভাগ মাদকদ্রব্য আনাগোনা করে। এই মাদকের আগ্রাসন থেকে নারী-পুরুষ, কিশোর-যুবা কেউই মুক্ত থাকতে পারছে না। বেকারত্ব ও হতাশা থেকে মানুষ সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত হচ্ছে। বস্তি থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। এখন নারীরাও পিছিয়ে থাকছে না।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকা শহরের নামিদামি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক ছাত্রী মাদকাসক্ত। এই ব্যাপকতার পাশাপাশি নেশার জগতে নতুন নতুন মাদকদ্রব্যের সংযোজন ঘটছে। এতদিন নেশার জগতে রাজা হয়ে বসেছিল হেরোইন আর এখন মাদকসেবীরা নতুন রাণীর সন্ধান পেয়েছে। তরুণ-তরুণীর ভাষায় ইয়াবা হচ্ছে- দ্য কুইন। আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা জানে মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ইয়াবাকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালীগুলো ধ্বংস করে। ফলে ব্রেন স্ট্রোক ঘটতে পারে। নেশার প্রতিক্রিয়া কোকেনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বলে সব জানার পরও এটার প্রতি সবার নজর। এই সর্বনাশা মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে কিশোর-তরুণরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের টাকা না পেয়ে খুন-জখম করার ঘটনা ঘটছে। এখান থেকে নিকটজনরাও বাঁচতে পারছে না। সমাজ ঐশীদের ভুলবে কীভাবে? দেশে অবৈধ মাদকপ্রবাহ রোধ, মাদক পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতি সচিবালয় থেকে অধিদপ্তরকে পৃথক করে; তের মণ তেলও জোগাড় হয়নি রাধাও নাচেনি। পরিকল্পনা ফাইলে বন্দী হয়েই পড়ে আছে। সরকার একক দায়িত্বে মাদকের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারবে না। সমাজকে নেতৃত্বদানকারী মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ নেতৃত্বদানকারীরা যদি মাইন্ড সেট করে তারা মাদকের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করবে তবে সম্মিলিত উদ্যোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে। মাইন্ড সেট হলেই নির্ভীকভাবে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি পরিবারে বাবা-মা দুজনকেই তাদের সময়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। আমাদের সাধারণ পরিবারগুলোতে মায়ের ওপর একক দায়িত্ব বর্তায়। এটা করলে হবে না। বাবা-মা উভয়কে সন্তানদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। এই সময় ও আচরণ পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে সহায়ক হবে। এই পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হলেই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হবে। তাতে করে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করার এবং নিজেদের অসুবিধাগুলো সমাধানের পথ পাওয়া যায়। সরকার আইনের সাহায্যে সমাজ ও পরিবার হতাশা এবং অবক্ষয় কমানোর দায়িত্ব পালন করবে। বাবা-মা’ই পারে প্রাথমিকভাবে সন্তানকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে। ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে তবেই হতে পারে মুক্তির পথ। সরকার টাস্কফোর্স গঠন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সমাজ মানবিক হাত বাড়িয়ে দিলে জাতি মাদকের ছোবল থেকে মুক্তি পাবে। মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি পবিত্র আমানতস্বরূপ। এ আমানতকে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঠেলে দেয়ার কোনো এখতিয়ার মানুষের নেই। মাদকাসক্তিতে মানুষের কোনো না কোনো ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই এবং ধীরে ধীরে তা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ফুসফুস ও মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে, হৃদস্পন্দন ও অবস্থা খারাপ হয়, চোখ রক্তবর্ণ হয় এবং মুখ ও গলা শুকিয়ে আসে। মানবদেহে ক্রমাগত অপুষ্টি বাসা বাঁধতে থাকে, স্থায়ী কফ, কাশি ও যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নেশাগ্রস্ত যুবক-যুবতীদের উল্লেখযোগ্য অংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করার কারণে মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কঠোর ভীতি প্রদর্শন করে আমাদের নবি করিম [সা.] সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল। [মুসলিম]। কোনো মাদকাসক্ত বা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ইমানদার হতে পারে না। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, মাদক ও ইমান দু'টো একত্র হতে পারে না। [নাসাঈ] যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। মাদকাসক্তি ত্যাগে আসক্ত ব্যক্তিদের উৎসাহিত ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দরকার। পরিশেষে বলব, মাদক ও মাদকাসক্তির সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসূল সা. অভিশাপ করেছেন। ১. যে লোক মদের নির্যাস বের করে। ২. প্রস্তুতকারক। ৩. মদপানকারী। ৪. যে পান করায়। ৫. মদের আমদানীকারক। ৬. যার জন্য আমদানী করা হয়। ৭. বিক্রেতা। ৮. ক্রেতা। ৯. সরবরাহকারী এবং ১০. মাদক ব্যবসায় লভ্যাংশ ভোগকারী। তাই, আসুন-সর্বগ্রাসী মাদকের বিরুদ্ধে নিজে সতর্ক হই, ইসলাম নির্দেশিত হুকুম আহকামগুলো মেনে চলি, পরিবারকে সচেতন করি- পাশাপাশি সমাজের অন্যদেরকেও মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন