পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এবং শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দ্বিতীয়বারের মতো ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে? জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা বলা হয়নি। গত শুক্রবার সমাজসেবা অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদে লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। এবারও পরীক্ষার আগের দিন স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষার আগে ২৭ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে এ পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তার তারিখ এখনো বলা হয়নি সমাজসেবা অধিদফতর থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদে অনুষ্ঠেয় লিখিত পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে তা ক্ষতিয়ে দেখা।
পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এবং শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দ্বিতীয়বারের মতো সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এভাবে পরীক্ষা স্থগিত করায় লাখ লাখ পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে এবং কোটি টাকা বাস ও রেল টিকিটের গচ্ছা গেছে। আবার অনেক চাকরিপ্রার্থীদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সমাজসেবা অধিদফতর ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকর্মী ১৬তম গ্রেডের পদ। ৪৬৩টি শূন্য পদের বিপরীতে প্রার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। প্রতি পদের বিপরীতে প্রার্থী ১ হাজার ৪৩০ জন। এ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এবং শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে আসার কারণে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে আসার কারণে দ্রæত ভিত্তিতে সমাজসেবা অধিদফতরের পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব কাজ কারা করছে তা তদন্ত করা হবে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে সমাজসেবা অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদে লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। স্থগিতের আগেই ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছিল। এ ধরনের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানিয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ও বিভাগীয় নিয়োগ কমিটির সভাপতি সৈয়দ মো. নূরুল বাসির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, শুক্রবার বিকেল ৩টায় সমাজসেবা অধিদফতরের সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদে অনুষ্ঠেয় লিখিত পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো। নোমান রুশাফী নামের এক চাকরিপ্রার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্নের একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা, বিসিএস পরীক্ষাই কি শুধু চাকরির পরীক্ষা? অন্যান্য পরীক্ষাগুলোকে কি পরীক্ষা মনে হয় না? এর জবাব কে দেবে? বিসিএস পরীক্ষা এতটা সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া হলেও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষাগুলো সেইভাবে নেয়া হয় না কেন? মো. আসাদুজ্জামান নামের একজন লিখেছেন, দেশটি কাদের দ্বারা, কাদের জন্য এবং কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে? স্থগিত করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল! আর স্থগিত কেন করতে হলো! অনিবার্য কারণটি কী! প্রশ্ন ফাঁস? তাই যদি হয়, তবে ফাঁসে যারা জড়িত তাদের ফাঁসি কই? হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, তাদের ফাঁসি কই? রাষ্ট্রের অসীম ক্ষমতা তবে কাদের ওপর প্রয়োগ হবে?
আশিকুল ইসলাম তমাল নামে একজন চাকরিপ্রার্থী বলেছেন, এভাবে সব নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি হচ্ছে। দেখা গেছে, ভাগ বাটোয়ারায় মতের অমিল হলে এসব জালিয়াত প্রকাশ্যে আসছে। নয়তো গোপনেই এসব থেকে যাচ্ছে। সামনে আসছে বলে আমরা জানতে পারছি। যেগুলো সামনে আসে না, সেগুলো কেউই জানতে পারে না। এমন পরিস্থিতির দ্রæত পরিবর্তন জরুরি। এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সমাজকর্মী (ইউনিয়ন) স্থায়ী রাজস্ব পদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। আর এবার স্থগিত হলো পরীক্ষার আগের দিন।
রংপুর থেকে ঢাকায় আসা ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা জানান, এভাবে পরীক্ষা স্থগিত করায় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বাসের টিকিট পাওয়া যায় না। তারপর একদিন আগে ঢাকা এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। আমার টাকাগুলো গচ্ছা গেছে। আমি চাই যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করতে হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন