ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : মেলায় ভিড় মানেই হচ্ছে বইয়ের বেশি বেশি বিকিকিনি। আর বেশি বই বিক্রি মানেই প্রকাশকদের মুখে হাসি। তবে শুধু প্রকাশকারই হেসেছেন তা নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত। শুক্রবারই মেলায় এসেছে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক বই। তাই প্রিয় লেখকের নানা ধরনের বই কিনে খুশি ছিলেন পাঠকরাও।
এদিকে আজ বসন্ত হলেও গতকালই বই মেলায় দেখা গেল বসন্তের ছোঁয়া। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে দেখা যায় ফুল ও তরুণীদের মাথায় উজ্জ্বল মুকুট হয়ে আছে হলুদ ফুলের টায়রা। সব মিলিয়ে অনুপম বৈপরীত্য। মেলায় আগত অনেকের পোশাকেও ছিল হলুদ ফাগুন জাগানো বসন্ত।
গতকাল গেট খোলার আগেই জন¯্রােত দেখা যায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝের রাস্তাটিতে। দোয়েল চত্বর ও টিএসসির দিকের প্রবেশ পথে সারি সারি মানুষ আসছেন, যাচ্ছেন। দুপুর ৩টায় গিয়েও দেখা গেল চারিদিকে লাইন আর লাইন। লম্বা লাইনে মেলার সৌন্দর্য অন্যরম হয়েছে উঠেছে। তল্লাশি করে তাদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ভেতরে গিয়েও দেখা গেল, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনে মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ।
এই বিষয়ে মুক্তচিন্তার প্রকাশক বলেন, অন্য যে কোনো দিনের থেকে বই ভাল বিত্রিু হচ্ছে। অন্যদিনের থেকে পাঠকও অনেক বেশি। মনে হচ্ছে মেলা তার পুরো যৌবনে। গতকাল মেলায় দেখা হয় তরুণদের প্রিয় লেখক ড. আনিস আহমেদের সাথে তিনি বলেন, আজ মেলায় বইপ্রেমীদের দেখেই মনটা ভরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পাঠকরা তাদের চাহিদা মত বইয়ের বসন্তে নিজেকে রাঙিয়ে তুলচ্ছে। আপনার বই কেমন চলছে? তিনি বলেন, এ বছর ভালোবাসা ফিরে ফিরে আসে এই নামে আমার একটি উপন্যাস এসেছে। বইটি প্রথম থেকেই তরুণ পাঠকদের নজর কেঁড়েছে। পাঠকরা বইটি কিনছেন ও দেখছে।
এদিকে শিশুদের পদচারণায় মুখরিত বইমেলা ছিলো অমর একুশে বইমেলার শিশু প্রহর। নানা বয়সী শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরে দেখছে মেলা। শিশু কর্নারের বিভিন্ন স্টলে গিয়ে দেখছে নিজেদের পছন্দের বই। কিনছে নিজেদের পছন্দনীয় বিভিন্ন শিশুতোষ বই। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’য় এমন আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।
সিসিমপুরের শুক্রবারের আয়োজনটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। বিচিত্রপূর্ণ রঙে সাজানো বর্ণাঢ্য সেটে ছিল ইকরি, টুকটুকি, হালুম ও শিকুর প্রাণবন্ত পরিবেশনা। সেই সাথে সিসিমপুরের নতুন একটি সিডি ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই মনোজ্ঞ আয়োজনে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা : সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। বিচারকম-লীর সদস্য হিসেবে থাকেন আনিসুর রহমান তনু, ইয়াকুব আলী খান এবং সাগরিকা জামালী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। প্রতিযোগিতায় দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে নজরুলচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রফিকউলাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহীত উল আলম, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ এবং কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত নজরুল গবেষক ইমেরিটাস প্রফেসর রফিকুল ইসলাম।
আজকের অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রফেসর মেসবাহ কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং দিব্যদ্যুতি সরকার। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন