সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশের জঙ্গিদের সাথে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র মেলেনি

প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৮ পিএম, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মনিরুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের জঙ্গিদের সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কোন যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর সাথেও এ দেশের জঙ্গিদের যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আমলে জঙ্গিদের স্থান এ দেশে হবে না। এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। জঙ্গিদমনে একদল চৌকস, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। দেশের মানুষ আজ জঙ্গিদের রুখে দিয়েছে।
গতকাল ইনকিলাবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
বিদেশ থেকে জঙ্গিদের নামে অর্থ আসা প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা যে শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই অর্থ পাচ্ছে এমনটি নয়; কানাডা, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও এদেশের জঙ্গিদের নামে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। এসব অর্থের উৎস ও কারা যোগানদাতা আমরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছি। অবশ্যই এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র‌্যাব কি বলেছে তা আমি শুনি নাই, দেখিও নাই। কারণ আমি বিদেশে ছিলাম। তবে তাভেল্লা হত্যা মামলাটি বিচারাধীন। এই মামলা নিয়ে ওইভাবে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, ডিবির গোয়েন্দা বিভাগ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটা পরীক্ষিত তদন্ত সংস্থা। প্রতি মাসেই তাদের দুই একটা করে মামলা শেষ হচ্ছে। সাজা হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এসব দেখে তদন্তের মান পরিমাপ করা হলে সেটা ভালো। তাভেল্লা হত্যা মামলাটি একদল পেশাদার তদন্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা তদন্ত কাজটি হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এদের স্থান নেই। কেউ এদের সমর্থন করে না। এমন কি জঙ্গি সদস্যরা মারা যাওয়ার পর তাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কেউ লাশ পর্যন্ত গ্রহণ করতে আসেননি। এতে বুঝা যায় তাদের কেউ পছন্দ করেনি এবং দেশের মানুষ জঙ্গিবিরোধী। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এদেশের মানুষ জঙ্গিবিরোধী। যারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশের তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করছে তারা মূলত ইসলামের শত্রু, দেশ ও জাতির শত্রু, মানবতার শত্রু। এ দেশের মানুষ ধর্ম ভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই দেশের জনগণের সহযোগিতা নিয়ে কম সময়ের মধ্যে জঙ্গিদের দমন করা সম্ভব হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি ইস্যু এখন বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলা হচ্ছে। এ সমস্য শুধু বাংলাদেশের একক কোন সমস্যা নয়। আমাদের দেশে যারা জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে তারা মূলত অন্যের মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে। এদের আসলেই ইসলাম ধর্ম এবং আল কোরআন সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। ইসলাম কখনোই মানবতাবিরোধী নয়, বরং মানবতাকেই ইসলামে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যায় ফৌজদারি কার্যবিধির সব নিয়ম-কানুন মেনেই আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে নব্য জেএমবি জড়িত নয়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান আরো বলেন, ‘তাভেল্লা হত্যা মামলা বিচারাধীন। এ নিয়ে মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই। দুই মাস তদন্তের পর এর রহস্য বের হয়। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ করা হয়। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির সব নিয়মও অনুসরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশর জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে আইএস-এর কোন ধরনের সম্পৃক্ততা এ পর্যন্ত আমরা পাইনি। এ পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাছ থেকেও এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আমাদের তদন্তে আমরা যা পেয়েছি, তা হলো এদের সাথে আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র নেই। দেশীয় কিছু লোক বিভ্রান্ত হয়ে ‘নব্য জেএমবিতে’ যোগ দেয়, তবে এদের সাথে আগের জেএমবির মিল নেই।
র‌্যাবের একটি সংবাদ সম্মেলনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার বক্তব্য জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম আবারও বলেন, ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যার অভিযোগপত্র তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব সারোয়ার জাহানকে ‘নব্য জেএমবির’ প্রধান বলে দাবি করেছে। কিন্তু তিনি তৃতীয় সারির একজন নেতা। এ ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও আছে।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ দাবি করেন, সিজার তাভেল্লা হত্যাকা-ে ‘নব্য জেএমবি’ জড়িত। সারোয়ার জাহানের নেতৃত্বে সিজার তাভেল্লা হামলার শিকার হন।
কিন্তু পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বলছে, এই হত্যাকা-ে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম জড়িত। তাকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট দেয়। গত মঙ্গলবার আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
র‌্যাব ও পুলিশের এই ভিন্ন তথ্যের ব্যাপারে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিবি তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যা মনে করেছে, তার ভিত্তিতেই চার্জশিট দিয়েছে। এটা কোনো সৃষ্টিশীল রচনা ছিল না। তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যা পাওয়া গেছে, পুলিশ তা-ই বলেছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, র‌্যাবের মহাপরিচালক এ কথা বলেননি। একটা দায়িত্বশীল পর্যায়ে থেকে বিচারাধীন কোনো বিষয়ে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না।
গত শুক্রবার ওই সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরীকে যখন ঘিরে ফেলা হয়, তখন তাঁর সঙ্গে সারোয়ার জাহানের খুদে বার্তা বিনিময় হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ওই দিন সকাল সোয়া ছয়টার দিকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের সদস্যরা তামিমকে ঘিরে ফেলেন। এরপরে তামিম চৌধুরীর হাতে খুব কম সময় ছিল। সে সময় সামান্য যে যোগাযোগ তিনি করতে পেরেছিলেন, তা তানভীর কাদেরী ও মেজর জাহিদের সঙ্গে।
তিনি আরো বলেন, শীর্ষস্থানীয় নেতারা অভিযানে নিহত হওয়ায় ‘নব্য জেএমবির’ মাঝারি বা নিচের সারির কিছু নেতা এখন দায়িত্ব নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্তে গুলশানের জঙ্গি হামলার সাথে আইএস এর কোন সুযোগসূত্র পাওয়া যায়নি। যারা এ হামলায় জড়িত মূলত তাদের ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা বা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।
এ পর্যন্ত কতজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে এবং আরো কতজন ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে যোগাযোগ করেছে জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, এ ব্যাপারে কোন কিছু বলা যাবে না। কারণ তাদের নিরাপত্তা এবং তদন্তের স্বার্থেই এই স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটা জোর দিয়ে বলা যায়, জঙ্গিদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জঙ্গিদের এমনকি অস্ত্র গোলাবারুদও জব্দ করা হয়েছে। ফলে তারা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। যেহেতু জনগণের সমর্থন নেই এবং পরিবারের সদস্যরাও তাদের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে, ফলে তাদের মনোবল দুর্বল হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ দেশের আলেম ওলামা মসজিদের ইমামসহ ধর্মপ্রাণ সকল স্তরের মানুষ জঙ্গিবিরোধী। এটা তারা বুঝতে পেরেই এখন অনেকেই অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।
জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে এখন পর্যন্ত আরো কতজন বাড়ি ছাড়া আছে বা নিখোঁজ রয়েছে এর কোন তালিকা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এমন কোন তালিকা নেই। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা যে সবাই জঙ্গিবাদে যোগ দিয়েছে এমন কোন তথ্যও নেই। তিনি আরো বলেন, শুধু যে মাদ্রাসায় পড়লেই জঙ্গি হবে এমন ধারণা সঠিক নয়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করচ্ছে, এমন মেধাবীরাও জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
হাবিব ২৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১:০১ পিএম says : 0
দেশ থেকে জঙ্গি স্বমূলে বিনষ্ট করতে হবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন