স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প শুধু সুন্দরবন নয় দেশের জন্যও ক্ষতিকারক, দেশ ও গণবিরোধী এই উদ্যোগ ঠেকাতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এ বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপির সমর্থন গ্রহণ করতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, রামপাল প্রকল্পের বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু করা যাবে না। আজকে শ্রদ্বেয় আনু মুহাম্মদ সাহেবরা যে আন্দোলন করছেন, আমরা তাকে সমর্থন করি, সমর্থন দিয়েছি। তাদের উচিৎ হবে আমাদের সমর্থনটাকে গ্রহণ করা এবং সমগ্র জাতিকে এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা।
রামপালের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা করতে দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রথমে খুলনার জনগণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারপরই সমস্ত বাংলাদেশের মানুষ এরসঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সেমিনার করে মানুষকে বুঝাতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভারত সমান অংশীদারিত্বে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারী-কৈর্গদাসকাঠি মৌজায় এক হাজার ৭৩৪ একর জমিতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
তেল-গ্যাস কমিটি সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে একই দাবিতে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চ করেছিল তেলগ্যাস রক্ষা কমিটি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি করছেন তারা।
অন্যদিকে সরকারের দাবি, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ দূষণ ও প্রতিবেশের ক্ষতি যাতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ‘জিয়া সাইবার দল’ এর উদ্যোগে ‘সুন্দরবন বাঁচাও, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঠেকাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করে বিএনপির জলবায়ু পরিবর্দন বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রামপালে কযলা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে শুধুমাত্র সুন্দরবনেরই ক্ষতি হবে না, ভবিষ্যতের জন্য এদেশের জনগণের ক্ষতি করবে। এই সরকার জনগণের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করে না বলেই তারা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কারণটা যাদের কাছ থেকে তারা এই প্রকল্প নিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনÑ এটা আমি করবই, তাতে যে মূল্যেই দিতে হোক না কেনো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আজকে আমরা নিজেরাই জলবায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি, আমাদের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি। এদের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।
জাতীয় সংসদে রামপালের বিষয়টি কোনো আলোচনা না হওয়ারও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশে নির্বাচন নেই, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে রয়েছে। সেখানে গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্যে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্যে, জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করার জন্যে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পথ নির্দেশ দেবেনÑ সেটাই মানুষ আশা করেছিলো।
আমাদের নেত্রী বলেছেন আসুন এই সংকটগুলো নিরসন করার জন্য আমরা একটা আলোচনায় বসি, সংলাপে বসি। সেখান থেকে একটা সমাধান বেন করি। কিন্তু এরা সেই আলোচনায় যেতে চায় না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার ভালো করেই জানে, সেটা সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের ভরাডুবি হবে। সেই কারণে তারা সেই নির্বাচন দেখতে চায় না, গণতন্ত্রে ফিরে আসতে চায় না। এজন্য তারা (ক্ষমতাসীন দল) বার বার করে বলে যে, গণতন্ত্র আমাদের সেকেন্ডারি বিষয় প্রথম বিষয় না।
জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে ভয়-ভীতি, সন্ত্রাস করে, ত্রাস করে তারা দেশের মানুষকে বেশিদিন আটকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করতে হবে, গণতন্ত্রকে বিনাসের যে চক্রান্ত তাকে ধ্বংস করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাহেবকে নিশ্চিহ্ন করার যে চক্রান্ত তা প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।
খুলনার বাগেরহাট বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলমুজাদ্দেদি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রনু, সাংবাদিক রাশেদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন