বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৬০ বছরেও জমি অবমুক্ত হয়নি

গেন্ডারিয়া ডিআইটি প্রজেক্টের ভূমি মালিকদের কান্না : শেষ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার ভূমির খাজনা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ৬০ বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কয়েকশ’ অসহায় মানুষ। বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের দুয়ারে মাথা ঠুকেও রেহাই পাচ্ছে না তারা। প্রকল্পের বাইরে থাকা জমি, ঘর এবং বাড়ি অবমুক্ত করণের জন্য ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ বার রাজউক ও ডিসিকে আবেদন করেছে।

জানা যায়, রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার ডিআইটি প্রজেক্টের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ কেস) ১৩৭ মামলাকে পুঁজি করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু তাদের এ সমস্যার কোনো সমাধান হয় না। ভূমি রেকর্ড, দখল, দলিল-পর্চা সব কিছুই রয়েছে তাদের। এর পরও তারা জমির নামজারি করে খাজনা দিতে পারছে না। এমনকি নতুনভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারছে না। আবার আবেদনকারীদের অনেকেই মারা গেছে। তার ছেলে ও মেয়েরা মামলা করে বাড়ি ও জমিতে বসবাস করছেন। কিন্তু রেকর্ড সংশোধন ও খাজনা দিতে পারছে না। প্রকল্পের শুরুতে বলা হয়েছিল যাদের জমি প্রকল্পের মধ্যে পড়বে তারাই শুধু জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন। আর প্রকল্পের বাইরে থাকা যাদের জমি প্রকল্পের নামে অধিগ্রহণ হয়েছে। প্রকল্প শেষে ক্ষতিপূরণ না নিলে তা ফিরিয়ে দেয়া হবে না।

অথচ ১৯৭২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজউক ও ডিসি প্রশাসক জমি ও বাড়িগুলো অবমুক্ত করেনি। বরং রাজউকের কর্মকর্তারা প্রতিদিনই এসব বাড়ি ও জমির মালিককে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। গেজেট ছাপা হয়নি এ অজুহাতে নামমাত্র দাফতরিক চিঠি দিয়ে এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। গেজেট ছাপার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের, অথচ দায় চাপানো হচ্ছে জমির মালিকদের ওপর। এ কথা জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে যুগ যুগ ধরে প্রক্রিয়াটি আটকে রয়েছে। মূলত হয়রানি এবং মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে গেজেট ছাপানো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ভ‚মির মালিকরা অভিযোগ করেছেন।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) যুগ্মসচিব মো. মুনির হোসেন খান ইনকিলাবকে বলেন, আসলে এ ধরনের অভিযোগ এখনো আমার কাছে আসেনি। তবে ডিসি অফিসের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন আসলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব। তাছাড়া জমি অবমুক্ত করা বা অধিগ্রহণ করার দায়িত্ব ডিসি অফিসের। আমাদের নয়।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রয়োজনে যেকোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু অবমুক্ত করে ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়ার পর তা আর সরকারের মালিকানায় থাকে না। এ ছাড়া ভূমি জরিপে জমি আগের মালিকদের নামে রেকর্ড হওয়ার পর আইনগতভাবেও সরকারের মালিকানা লুপ্ত হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসন কোন আইনে সেসব জমির নামজারি ও খাজনা নেয়া বন্ধ করেছে তা বোধগম্য নয়। ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে দায়িত্বরত যুগ্ম সচিব।

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তারা নীতিগতভাবে ভূমি মালিকদের পক্ষেই আছে। এ কারণে অতীতে সেসব জমির নামজারি ও খাজনা বহাল ছিল। কিন্তু মাঝেমধ্যে কোনো কোনো কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এবারও তা করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, নামজারি ও খাজনা বন্ধের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়র নতুন যে নীতিমালা জারি করেছে সেখানে কিন্তু ভুল সংশোধন করতে পারনে। কিন্তু রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার ডি আই টি প্রজেক্ট জমি ও বাড়ির মালিকদের বিষয় আমার জানা নেই। আবেদন থাকতে পারে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।

রাজধানীর গেন্ডারিয়া সূত্রাপুর শহর ঢাকা মৌজার ভূমি মালিকরা জানান, তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি সরকারি প্রকল্পের প্রয়োজনে না লাগায় ১৯৬৫ সালে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালের নোটিশের মাধ্যমে ওই বছরের মধ্যে উত্তোলিত ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তৎকালীন বিশেষ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেন। আবার প্রকল্পের বাহিরে থাকা জমির মালিকরা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করেনি। কিন্তু দুই দফায় ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত নিয়েও রহস্যজনক কারণে অবমুক্তকরণের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২-১৯৬৩ সালে উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত করা এবং নিষ্কণ্টক মালিকানার স্বার্থে তৎকালিন (ডিআইটি) বর্তমানে রাজউক তাদের প্রয়োজনীয় জমির তালিকা প্রকাশ করে বেশির ভাগ জমিই মূল মালিকদের কাছে ছেড়ে দেয়। গেজেট প্রকাশ করার জন্য ওই তালিকা করা হয়। দীর্ঘ ৬০ বছরেও ঢাকা জেলা প্রশাসন কেন অবমুক্ত জমির গেজেট প্রকাশ করেনি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ ভূমি অধিগ্রহণের গেজেট প্রকাশ করার আইনগত দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের- এ কথা ঢাকা জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা থেকে স্বীকার করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার সতিশ সরকার রোর্ডের বাসিন্দার শেখ আবু বকর মিয়া ১৯৭৩ সালে তার জমি ও বাড়ি অবমুক্ত করণের জন্য ঢাকা জেলার ডিসিকে আবেদন করে তিনি মারা গেছে। এর পরে তার ছেলে মো. আবুল হোসেন গত ২০১৮ সালে আবেদন করেন। সে সময়ের জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নিয়ে একটি তদন্ত করিয়েছেন। তদন্ত তদন্তেই থেকে গেছে ডিসি অফিসে। তার মধ্যে আবার আবুল হোসেনও মারা গেছে।

মোছা. রাখিয়া খাতুন নামে আবেদন করেন। সে আবেদন ও ডিসি অফিস থেকে তদন্ত করা হয়েছে। আসলে তদন্ত প্রতিবেদন ডিসি অফিস থেকে ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাজউকে আসে না। এলাকার ভূমি মালিকরা জানান, জমি অধিগ্রহণ হলেও সেসব জমির সিএস, এসএ, আরএস ও সিটি জরিপের কোথাও সরকারের স্বার্থ নেই। এ কারণে মালিকানার ধারাবাহিকতার স্বার্থে ভূমি মালিকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে নামজারি করে খাজনা দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া ভূমিমালিকরা নিজ জমিতে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। গত ৬০ বছরে এসব জমি অনেকবার বিক্রি হয়েছে এবং মালিকের মৃত্যুজনিত কারণে মালিকানার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কখনো সরকারের কোনো সংস্থা বা রাজউক সেসব জমি নিজেদের বলে দাবি করেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md shahalam miji ১ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
৬০ বৎসর পরেও জমির মালিককে জমি ফিরিয়ে না দেওয়া এটা খুবই অমানবিক কাজ। একইভাবে ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের জন‍্য অদিগ্রহন করা অ ব‍্যাবহার করা অনেক জমি মালিককে ফিরিয়ে দেওেয়া হয়নি। মামলা যুগ যুগ দরে চলমান। খুবই আমানবিক অন‍্যায় কাজ,কারা এসব করছে,সরকারের সুনামের ক্ষতি করছে অতি শীঘ্রই তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন