শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অবশেষে ক্ষতিপূরণ পেলেন সেই গৃহকর্মী খাদিজা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

৯ বছর আগে ঢাকার মিরপুরে নির্যাতনের শিকার হয়েও পুলিশের কাছ থেকে প্রতিকার পাননি শিশু গৃহকর্মী খাদিজা। অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রথমবারের মতো ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান।

জানা যায়, ২০১৩ সালে খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছিল। খাদিজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। তাকে গরম ইস্তিরি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছিল বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিসকেরা জানিয়েছিলেন। শিশু খাদিজাও তখন জানিয়েছিল, তাকে প্রায়ই মারধর করা হতো। তবে পরে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদিজাকে কেউ মারধর করেনি।
খাদিজার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় যথাযথ প্রতিকার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেছিল চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (সিসিবি) নামের একটি সংগঠন। কমিশন খাদিজার নির্যাতনের বিষয়ে মামলা না নেওয়ায় পুলিশের মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন খুঁজে পায়। তবে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি দিয়ে তদন্ত করতে বলে। এই চিঠি চালাচালিতে ছয় বছর পার হয়ে যায়। কোনো প্রতিকার না পেয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিসিবির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট রায়ে মন্তব্য করেন, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে মারাত্মক গাফিলতির পরিচয় দিচ্ছে; মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় ‘জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে’। এরপর হাইকোর্টের রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার ওপর নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি করে প্রতিকার দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে নির্যাতনের বিষয়ে খাদিজাসহ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুনানি শেষে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের ১১ বছরের যাত্রায় খাদিজার ঘটনায় প্রথমবারের মতো কোনো ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়। তবে সেই ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়ায় বিভিন্ন সময় কমিশনের সমালোচনা হয়।
সিসিবির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, গত এক যুগে এই প্রথম বাংলাদেশের সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ভুক্তভোগীকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের দায়বদ্ধতার বাস্তব উদাহরণ গত এক যুগে এ দেশে এই প্রথম। এটি নিপীড়িত মানুষের মানবাধিকারের একটি মাইলফলক অর্জন। এ অর্জন খাদিজা নির্যাতন মামলায় হাইকোর্টের প্রথম রায়ের নির্দেশনার একটি বাস্তব অর্জন। এটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয়তার একটি বড় অর্জন। মানবাধিকার কমিশন এখন থেকে বুক ফুলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিকার আদায়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খাদিজার জন্য ৫০ হাজার টাকার চেক তাদের হাতে আছে বলে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। আগামীকাল সোমবার চেকটি খাদিজার হাতে তুলে দেওয়া হবে।
মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার খাত ছিল না। তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট খাত সৃষ্টির তাগাদা দেন। এরপরই ক্ষতিপূরণ দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। তিনি বলেন, আমাদের তো জেল দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। জরিমানা করে এখন থেকে অন্তত মানুষের প্রতিকার পাওয়ার একটি ব্যবস্থা করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammad Sirajullah, M.D. ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১:০১ এএম says : 0
The Police officers who did not take the case must be brought to Justice immediately. Otherwise following the medical justice Khadiza should be allowed to Use hot Iron to polish the person responsible.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন