শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সরিষায় সম্ভাবনার হাতছানি

উদ্ভাবিত নতুন প্রজাতির ক্যানোলা বারি-১৮

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

সরিষা তেলের ইতিবাচক দিক দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। তাদের উদ্ভাবিত নতুন প্রজাতি ক্যানোলা সরিষা থেকে যে তেল পাওয়া যাবে তাতে থাকবে না ইরোসিক এসিড। কৃষি বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণার পর উদ্ভাবন করেছেন ক্যানোলা প্রজাতির সরিষা। আর এটির নাম দেওয়া হয়েছে বারি-১৮। পরীক্ষামূলকভাবে বগুড়ায় এই সরিষার চাষ করে বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, সরিষার নতুন প্রজাতি ক্যানোলা বারি-১৮ ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার এবং প্রতিবেশি দেশ ভারতে রফতানির উজ্জল সম্ভাবনা তৈরি করবে। নতুন এই সরিষার প্রধান বৈশিষ্ট হল সরিষার তেলের অন্যতম ক্ষতিকর উপাদান ইরোসিক এসিডের অনুপস্থিতি।

কৃষি গবেষকরা বলেছেন, মূলত ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড জাতীয় টক্সিনের কারনেই স্বাধীনতা পরবর্তী দুই দশক পর উন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারতে ভোজ্যতেলের বাজারে সরিষার জায়গায় স্থান দখল করে সয়াবিন। আর নব্বই দশকের পর এই জায়গায় সয়াবিনের পাশাপাশি আসে পামওয়েল।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভোজ্যতেল বলতে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা পামওয়েলকেই বোঝায়। বাংলাদেশ সয়াবিন ও পামওয়েল আমদানির জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। অথচ মাত্র ১০০ দিনের ফসল সরিষার চাষাবাদ পরিকল্পনা মাফিক বাড়ালে দেশের মোট অঙ্কের টাকা সাশ্রয় হবে। একই সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সেভেন সিস্টারসহ নেপাল, ভুটান ও সিকিম অঞ্চলে সরিষার তেল রফতানি করতে পারবে।
এ ব্যাপারে তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র জয়দেবপুরের পরিচালক ড. আব্দুল লতিফ আকন্দ ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় ক্ষতিকর টক্সিনমুক্ত ক্যানোলা প্রজাতির এই সরিষার তেলের ব্যাপকহারে ব্যবহার বেড়েছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়া থেকেই সরিষার অরিজিন এনে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগি করে নতুন জাত উদ্ভাবনের পর এটিকে মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদের অনুমতি দেওয়া দেওয়া হয়েছে।
চলতি রবি মৌসুমে সারাদেশে প্রায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে এর চাষ করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ কেজি বীজ। কৃষি বিভাগের ধারণা, এখান থেকে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত এক দশক ধরে সরিষার আবাদ বাড়ছে। তবে দেশি ও বিভিন্ন উফশী এবং হাইব্রীড জাতের সরিষা ও স্থানীয়ভাবে পরিচিত রায়সরিষার তেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর টক্সিন রয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে টক্সিনের অস্তিত্বের কথা বলতে গেলে প্রায় সবাই জানে। এর ফলে এখনও সরিষার তেলের ব্যবহার বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ও মুড়িমাখা তৈরি এবং ভাজাপোড়া খাবার বানানো বা গায়ে মাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

বগুড়া কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের ইনচার্জ ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার ইনকিলাবকে বলেন, নতুন উদ্ভাবিত ক্যানোলা বা বারি-১৮ সরিষার চাষাবাদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। আর সেটি হলে সব ধরনের রান্নায় সয়াবিন-পামওয়েলকে হটিয়ে সরিষা তেলের ব্যবহার বাড়বে। নতুন জাতের এই সরিষায় টক্সিনের মাত্রা মাত্র ১ দশমিক শুন্য ৬ শতাংশ। এপি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন