তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দাম কমলো। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশেও দাম কমানো হয়েছে। এবার চলতি জানুয়ারি মাসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে মূসকসহ প্রতি কেজি এলপিজি ১০২ টাকা ৩২ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৮ টাকা ১৭ পয়সা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ফলে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২২৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ৭৮ টাকা করা হয়েছে। সেই হিসাবে সিলিন্ডার প্রতি কমলো ১৫০ টাকা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই দাম কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল অনলাইনে বিইআরসি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দাম ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কমিশন চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সচিব আবু সায়িদ, সদস্য মকবুল ই ইলাহিসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বছর ডিসেম্বর মাসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে মূসকসহ প্রতি কেজি এলপিজি ১০৯ টাকা ৪২ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০২ টাকা ৩২ পয়সা করা হয়। এতে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩১৩ টাকা থেকে কমে হয় ১ হাজার ২২৮ টাকা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত (রেটিকুলেটেড) এলপিজির দামও কমানো হয়েছে। প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ০৮ পয়সা থেকে থেকে কমিয়ে ৯৪ টাকা ৯৪ পয়সা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে পরিবহনে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দামও, যা অটোগ্যাস নামে প্রচলিত। জানুয়ারি মাসের জন্য অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৫৪ টাকা ৯৪ পয়সায় আদেশ দেওয়া হয়। যা ডিসেম্বর মাসে ছিল ৫৭ টাকা ২৪ পয়সা। লিটারে কমেছে প্রায় ২ টাকা ৩০ পয়সা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সউদী সিপি অনুসারে জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে প্রতি টন ৭৯৫ থেকে কমে ৭৪০ এবং ৭৫০ ডলার থেকে কমে ৭১০ ডলারে নেমেছে। প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত ৩৫:৬৫ বিবেচনায় জানুয়ারি মাসের জন্য এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু ১২ কেজি নয়, সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দামই কমানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি, দাম সারাদেশে কার্যকর করার। কিন্তু কারা মানছে না সেটা মনিটরিং করা কমিশনের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব নয়। জ্বালানি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হবে। এতে দাম আরও ভালোভাবে কার্যকর হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আগের তুলনায় দাম না মানার প্রবণতা কমে এসেছে।
বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহী বলেন, আমরা বসুন্ধরাসহ বেশ কিছু কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে তাদের কোম্পানির এলপিজি বিক্রি করা দোকানগুলোতে কমিশনের নির্ধারণ করা দামের তালিকা প্রদর্শন করা হয়। ইতোমধ্যে অনেকেই রাজি হয়েছেন। আশা করছি, সবাই এই তালিকা প্রদর্শন শুরু করবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিমাসে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির নির্ধারিত দামের ঘোষণা দিচ্ছে কমিশন। কিন্তু প্রথম দিকে দেশের বাজারের কোথাও এই দামে এলপিজি বিক্রি হতো না। ব্যবসায়ীরা তাদের দাবি অনুযায়ী, পরিচালন ব্যয়সহ অন্য ব্যয়গুলো নির্ধারণ না করার অনুযোগ করছিল। এরপর বছরের মধ্যভাগে আবার গণশুনানি করে এলপিজি অপারেটরদের কিছু দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি।
তখন অনেকটা অনুরোধের সুরেই বিইআরসি চেয়ারম্যান অপারেটরদের বলেন, আপনারা এবার নিজেরা একটা ঘোষণা দিন, যাতে এই দামে এলপিজি বিক্রি হয়। কিন্তু সেই অনুরোধে কিছু কিছু অপারেটর সাড়া দিলেও বেশিরভাগ আগের মতোই আছে। এই অবস্থায় আজ কমিশন জানুয়ারি মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করেছে। সে আদেশের সঙ্গেই এলপিজি, অটোগ্যাস এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা এলপিজির তালিকা কীভাবে করা হবে তাও জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন