রফিক মুহাম্মদ : জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই চলছে কাউন্সিলের আলোচনা। পদ-পদবির প্রত্যাশায় নতুন প্রজন্মের নেতাদের শুরু হয়েছে লবিং তদবির। সব মিলিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলটি সাংগঠনিকভাবে সুসংহত হবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটিই ভাবছেন। এ ছাড়া দলের নীতিনির্ধারকরাও মনে করেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি আবার পুনঃশক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। বিএনপির কাউন্সিল সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত। সাংগঠনিক এই বিপর্যয় উত্তরণে দলকে পুনর্গঠন করার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য এবং ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান কাউন্সিল সম্পর্কে বলেন, সরকার কাউন্সিল আয়োজনে নানাভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। এসব মোকাবিলা করেই কাউন্সিলের প্রস্তুতি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। দলকে পুনর্গঠনের জন্য এ কাউন্সিল অপরিহার্য। তাই নির্ধারিত সময়েই দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে অনেকে মনে করছেন, জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে প্রচ- চাপে আছে বিএনপি। কাউন্সিলের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উদগ্রীব হয়ে আছে। অন্যদিকে দল ভাঙার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কাউন্সিল বানচালের সরকারি ষড়যন্ত্রও চলছে বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বলছেন, সরকার তাদের কাউন্সিল বানচালের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া গুটিকয়েক মিডিয়ার মাধ্যমেও দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও নেতারা অভিযোগ করছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকার আমাদের কাউন্সিল বানচালের নানা ষড়যন্ত্র করছে।
তবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি যথাসময়ে কাউন্সিল করবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের কাউন্সিলকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার হীন উদ্দেশ্যে মাত্র দুই দিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া সরকারের অপতৎপরতা সফল করতে দু-একটি পত্রিকা বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে। এসব কিছু মোকাবেলা করে বিএনপি নির্ধারিত তারিখেই কাউন্সিল করবে।
এর আগে এক-এগারোর বিপর্যয়ের পর ২০০৮ সালে বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই কাউন্সিলে দলের পরবর্তী নেতা তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। এক-এগারোর পর তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলের বিপর্যয়ে পাশে ছিল। সে সময় অনেক কেন্দ্রীয় নেতা বিশ্বাসঘাতকতা করলেও চেয়াপার্সনের পাশে ছিলেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এবারের এ দুঃসময়ও দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবেন, দলের চেয়ারপার্সনের এমন আত্মবিশ্বাস রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নেতাদের অনেকবারেই সতর্ক করেছেন। তিনি সব সময় বলেছেন, বিএনপির মূল শক্তি কোনো নেতা নয়। বিএনপি সাধারণ নেতাকর্মীদের দল, এদেশের সাধারণ মানুষের দল। কেউ ষড়যন্ত্র করে এদলকে ভাঙতে পারবে না। এবারের কাউন্সিলকে সামনে রেখে সারাদেশে দলের তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীর মধ্যে যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, তাতে বেগম খালেদা জিয়াও এখন বেশ উজ্জীবিত। দলের নেতাদের তিনি কাউন্সিলের সার্বিক প্রস্তুতিরও নির্দেশ দিয়েছেন। সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সাথে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করছেন। আগামী কাউন্সিলে মেধাবী ও যোগ্য নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন যাতে করা যায়, সেজন্য তিনি তৃণমূল থেকে তথ্য নিচ্ছেন।
কাউন্সিলের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাউন্সিল সফল করতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও ১১টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপার্সন পদের পাশাপাশি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন প্রবীণ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। সদস্য করা হয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন-আল রশিদকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমীনুল হককে। মির্জা ফখরুল জানান, নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা নেবে। দলের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে কেবল চেয়ারম্যান বা চেয়ারপারসন পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল। সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আলোকে এবার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন তারেক রহমান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন