শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে টিকা নিশ্চিতে জোর

কাল থেকে টিকা ছাড়া ক্লাসে যাওয়া বন্ধ ষ নিবন্ধন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতি সপ্তাহে সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস ও নতুন ধরন ওমিক্রণের বিস্তারের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে বরং খোলা রেখেই শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ বছরের বেশি সকল শিক্ষার্থীকে অন্তত এক ডোক টিকা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে আগামীকাল থেকে টিকা ছাড়া কোন শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে সরকারি ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন না। তাদেরকে বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর সংক্রমণের যে পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছিল, এখন সংক্রমণ বাড়লেও পরিস্থিতি ঠিক সেই পর্যায়েই রয়েছে। তাই আপাতত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের চিন্তা করছি না। আমরা বরং শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে এসে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছি। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা হয়েছে। টিকা নেওয়ার জন্য তাদের আর নিবন্ধন লাগবে না। পরিচয়পত্র বা কোনোভাবে পরিচয়ের প্রমাণ দিলেই শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে।

দীপু মনি বলেন, যারা এরই মধ্যে টিকা নিতে পারবে না তারা অনলাইনে বা টিভিতে ক্লাস করবে। আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থাও রাখব। তাহলে প্রাথমিকের বা ১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকা না পেলেও তারা স্কুলে যাবে। ১২ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা কম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে তাদের টিকা দেওয়ার কথা বলা নেই। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণ ছাড়াই স্কুলে যেতে পারছে। তবে যেসব শিক্ষার্থী ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য কোনো রোগে ভুগছে, অথবা শ্বাসকষ্টের মত জটিলতা আছে, কিংবা কোভিডে আক্রান্ত হলে যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের আপাতত স্কুলে না গিয়ে অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে বলা হচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত না হলেও সরকার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তারা নিয়মিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এক সপ্তাহ পর আবারও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও টিকা প্রদানের পরিসংখ্যানের তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২। এদের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪৪ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪। ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী এখনও প্রথম ডোজ পাননি। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের টিকার অন্তত একটি করে ডোজ দেওয়া যাবে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ৩৯৭ টি উপজেলায় বা থানায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করা যাবে, ৩ উপজেলায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে, ৫৬ উপজেলায় ২০ জানুয়ারি, ১৫ উপজেলায় ২২ জানুয়ারি, ৩৫ উপজেলায় ২৫ জানুয়ারি এবং সবশেষ ১১ উপজেলায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করা যাবে। মন্ত্রী বলেন, শুরুতে রেজিস্ট্রেশন নিয়েও ঝামেলা হয়েছে। অনেকের জন্মসনদ ম্যানুয়ালি ছিল আবার ওই জন্মসনদ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে হয়েছে। এসব সমস্যা ছিল কিন্তু এখন সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন শিক্ষার্থীদের জন্য পুরো প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে।

দীপু মনি জানান, ১০ শতাংশের নিচে টিকা দেওয়া হয়েছে এমন জেলার সংখ্যা চারটি। শতকরা ১০ থেকে ২০ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে ১২ জেলায়। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ১১টি, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ১০ জেলা, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ৪ জেলা, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ৪ জেলা, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ৭ জেলা, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ৬ জেলা, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ৪ জেলা। ৯০ শতাংশের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে দুই জেলায়।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, পাবলিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এসব মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৮ জন, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৩০২ জনকে। টিকার জন্য মোট নিবন্ধন করেছেন ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৮৭ জন।

তিনি জানান, পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ শতাংশের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কামিল, ফাজিল মাদরাসাগুলো অন্তুর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের একটি বড় সংখ্যা রয়েছে। এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মঙ্গলবার বসা হবে কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার কাজ সম্পন্ন করা যায়।

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা: বছরের মাঝামাঝি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের কারণে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালেও পাবলিক পরীক্ষা আমরা নিতে চাই। সময় মত হবে না এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ শিক্ষার্থীরা সেভাবে ক্লাস করতে পারেনি। আমরা একটা আভাস দিয়েছি যে, হয়ত বছরের মাঝামাঝি, আমাদের এখনও চিন্তা তাই। হয়তো ক্লাস করিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে পারব। এখনও সিদ্ধান্ত সে জায়গায় আছে। আশা করি পরীক্ষা নেওয়ার দুই থেকে তিন মাস আগে বলতে পারব, কোন তারিখে পরীক্ষা হচ্ছে। সদিচ্ছা যতই থাকুক, এটাতো আমাদের হাতে নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন