রূপগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের হাটাব আতলাশপুর এলাকার দিন মজুর নবীর হোসেনকে (৩৫) হাত-পা বেঁধে রেখে, গলায় রশি দিয়ে, পেটের ভুড়ি বের করে ও ২৫ কেজী ওজনের ইট বেঁধে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়।
আর এ হত্যাকা- সাত খুনকেও হার মানায়। শুধু তাই নয়, খুনীরা নবীর হোসেনকে হত্যার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মিলন মিয়াকে একটি মেসেজ দেয়া হয়। ওই মেসেজে লেখা হয়, ‘দয়া করে মিলন কাকা, আমি নবীর, ছিটাগাঙ থেকে নেপালের হুয়া জাহাজে যাইতাছি, আমার জন্য ছীনতা করিবেন না, আমার বাবা ও মাকে বলে দেন, আমার ফোন দেয়ার সময় নাই আসি, নবীর’। হত্যাকারীরা হয়তো জানতো, এ লাশের সন্ধান আর কেউ পাবে না। সবাই জানবে নবীর হোসেন বিদেশে চলে গেছেন।
নবীর হোসেন হত্যাকা-ের ঘটনায় তার বাবা আব্দুল্লাহ মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্দেহজনক আসামী হলেন, হাটাব এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে কবির হোসেন, ইছাপুড়া এলাকার লিটনসহ আরো অজ্ঞাত ৩ জন। এদের সঙ্গে জমি-জমা বিষয়াদি নিয়ে দেড় লাখ টাকার ঝামেলা নিয়ে নবীর হোসেনের বিরোধ ছিলো।
এছাড়া হাটাব এলাকার শুকুমার চন্দ্রের ছেলে উত্তম চন্দ্রের নামও উল্লেখ রয়েছে। শুক্রবার রাতে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনার সময় হত্যাকা-ে জড়িত থাকা সন্দেহজনক আসামী কবির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, মামলা দায়েরের আগ থেকেই প্রভাবশালীরা কবির হোসেনকে যাতে না জড়ানো হয়, সেজন্য বাদী ও তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এছাড়া রাতভর কবির হোসেনকে ছাড়াতে বিভিন্ন মহল দিয়ে তদবিরের চেষ্টা চালায়। এতে করে বাদী ও তার পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জসিম উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত কবির হোসেনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। এছাড়া মামলায় উল্লেখ সন্দেহভাজন বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অপরদিকে, ময়না তদন্তের পর শনিবার বাদ যোহর জানাযা শেষে সামাজিক কবরস্থানে নবীর হোসেনের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর প্রবাসী প্রভাবশালী কবির হোসেনের সঙ্গে নবীর হোসেনের বাড়ির সীমানা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। গত এক বছর আগে কবির হোসেনসহ তার লোকজন নবীর হোসেনসহ পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা করে। ওই ঘটনায় প্রতিবাদ করেছিলেন নবীর হোসেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর (একটি মাথা কেটে নেবে বলে) হুমকি দিয়ে বিদেশে চলে যায় কবির হোসেন। পুনরায় বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসার তিন দিন পরই নবীর হোসেন নিখোঁজ হয়।
এর আগে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৬ নম্বর ঘাটের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বেঁধে রেখে, গলায় রশি দিয়ে, পেটের ভুড়ি বের করা ও ২৫ কেজী ওজনের ইট বাঁধা অবস্থায় নবীর হোসেনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিবারের লোকজন নবীরের লাশ শনাক্ত করেন।
নবীর হোসেনের ভাই জাকারিয়া জানান, গত ২০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টার দিকে নিজ বাড়ি হাটাব আতলাশপুর থেকে কাঞ্চন যাওয়ার কথা বলে একই এলাকার সুকুমারের ছেলে উত্তমের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি নবীর হোসেন। আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের ২ দিন পর জাকারিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নবীর হোসেন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, যদি কোন প্রভাবশালী এ হত্যাকা-ের বিষয়ে মামলার বাদী বা তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে থাকেন এবং এর কোন প্রমান মিলে তাহলে ওই প্রভাবশালীকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া হত্যাকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন হত্যার রহস্য উদঘাটন করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন