শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

লঞ্চে আগুন : একটি মানবিক বিপর্যয়

হাবীবুল্লাহ সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

এখন আর কারো বাকি নেই এই শোকসংবাদ শুনার। মানুষপোড়া গন্ধে বরগুনার সুগন্ধা নদীর দুই তীর মাত হয়ে আছে। আকাশে বাতাসে ও নদীর জলে মানুষপোড়া গন্ধ। লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়েছে। বরগুনা ঝালকাঠি বরিশাল হয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট পর্যন্ত লাশ আর লাশ। পোড়াগন্ধা লাশ। বয়সী মানুষের লাশ। যুবক/যুবতীর লাশ। বাচ্চার লাশ। চিৎকার ছড়িয়ে পড়ছে সুগন্ধাপাড় থেকে সারাদেশে। হাহাকার বাতাসে উড়ছে। কান্না নিঃশব্দ হয়ে মর্মন্তুদ বেদনায় সর্বহারা পরিবারকে জ¦লেপুড়ে খাচ্ছে। ভাইয়ের সামনে ভাই পুড়ছে, বোনের সামনে বোন পুড়ছে, মাবাবার সামনে সন্তান। আহ! কতটা জ¦লন পীড়ন দগ্ধহৃদয়। এগুলো প্রকাশ করার শব্দও আমার অভিধানে নেই।

আল্লাহ মানুষকে আগুন দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানবিক বিপর্যয় দিয়ে পরীক্ষা করেন। মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। মানুষ যেন তার জীবন নিয়ে চিন্তা করে। আল্লাহর অসীম শক্তি নিয়ে ভাবতে থাকে। কেউ কি একবারের জন্য এমনটা ভেবে রেখেছিল? না, কেউ একবারের জন্যও ভাবেনি। অধিকাংশই চাকরিস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিল। চোখে মুখে হাজারো স্বপ্ন ছিল। আল্লাহ তাদেরকে অবর্ণনার এক বাস্তবতায় দাঁড় করিয়ে দিলেন। এখন যারা আগুনে পুড়ে জীবনের তরে এই পৃথিবী ত্যাগ করছেন; তাদের বাবা মা ছেলে সন্তান এখন কি নিয়ে বাঁচবে? যার সন্তানই একজন সেও জ¦লেপুড়ে নাই হয়ে গেছে! তার বেঁচে থাকার কোন মানে আছে? ওই মা আর বেঁচে থেকে লাভ কি যার তিন তিনটে সন্তান তার সামনে আগুনে পুড়েছে? এগুলোই আল্লাহর পরীক্ষা। এই পরীক্ষা ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ চাইলে এর বিকল্প পৃথিবীতে দিয়ে দিবেন; যেমন আইয়ুব আ. কে ধৈর্যের সাথে বালামুসিবত মুকাবেলা করেছিলেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাকে তার নিঃশেষ হওয়া সম্পত্তির ডাবল করে দিলেন। যাদেরকে দিবেন না তাদেরকে ধৈর্যের সাথে বাকি জীবনটা পাড়ি দিতে হবে। শুনুন আল্লাহর কথা- ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’। সুরা বাকারা : আয়াত নং ১৫৫-১৫৬
অসহায়ত্বের এই সময়ে ধৈর্য ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এই বিপর্যের ধাক্কা যাদের লাগেনি তাদের দায়িত্ব হলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা। তাদেরকে ধৈর্যধারণের পথ ও পদ্ধতি বলে দেওয়া। তারা যেন এই কারণে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটায়, সেই দিকে পূর্ণ মনোযোগ রাখা। এমনও হতে পারে এই ঘটনায় জীবন থেকে নিরাশ হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্যতম পথ বেছে নিতে পারে সবার আড়ালে। তাদের সামনে এই স্মৃতির ভুলে থাকার আয়োজন করা। তাদেরকে দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। শারীরিক চিকিৎসার সাথে সাথে মানসিক চিকিৎসাও করা। তারপর সবচে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেটি! এমন অনেক মানুষ পুড়েছে বা নিখোঁজ হয়েছে যাদের উপার্জন সক্ষম একমাত্র লোকটিই ছিল সে। সেই সব ভাগ্যাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে ত্বরিত গতিতে। তাদের সান্ত্বনা দিতে হবে। পত্রিকার সংবাদে দেখলাম একজন মহিলার ৬০ হাজার টাকা ছিল ব্যাগে। পুড়ে পুড়ে সব ছাই। খোঁজে খোঁজে এমন অসহায়দের সহযোগিতা প্রদান করা। এমন মানবিক বিপর্যয় দিয়ে আল্লাহ তালায়া দুই ধরণের মানুষকে পরীক্ষা করেন। এক. বিপদগ্রস্ত যে ধৈর্যের মাধ্যমে পরীক্ষা দিবে। দুই. যারা বিত্তভৈববের মালিক তাদেরকে পরীক্ষা করেন। তাদের পরীক্ষা হলো অসহায়দেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা করে। যদি বিত্তশালীরা এই সময় এগিয়ে না আসে; তাহলে তাদের কপালেও দুর্ভোগ আছে। হয়তো এই দুনিয়ায় দুর্ভোগে পড়বে না, কিন্তু আল্লাহ ছাড় দিবেন না। শুনুন আল্লাহ বলে- ‘ওইদিন জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তার ললাটে পার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে আর বলা হবে এই সেই বস্তু যে বস্তু তুমি জমা করে রেখেছিলে’। সুরা তাওবা : আয়াত নং ৩৫। এই আয়াতে ওই সব লোকদের হুশিয়ারি করা হয়েছে যারা তাদের মাল অর্থ সম্পত্তির ব্যাপারে কৃপণতা করেছে। যারা মানুষের অসহায় সময়ে দান সদকা করে মানুষের পাশে থাকেনি। এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সাথে সাথে যারা পাশে দাঁড়াবে তাদেরও সুসংবাদের কথাও বলেছেন। রাসুলুল্লাহ বলেন- ‘দানশীল আল্লাহর নিকটবর্তী। আর যে আল্লাহর নিকটবর্তী হবে সে জান্নাতের অধিবাসী হবে ও সে মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে। জাহান্নাম থেকে বহুদূরে থাকবে। আর কৃপণ আল্লাহর থেকে দূরবর্তী। আর যে আল্লাহর থেকে দূরবর্তী সে জাহান্নামের অধিবাসী মানুষ কাছে অপ্রিয় এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী। কৃপণ ইবাদতকারী থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় অজ্ঞ দানশীল’। (আবু দাউদ)
এই হাদিসের সাথে সাথে আমরা আরো একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই। যেটি মূলত একটি দোয়া যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত পাঠ করতেন- ‘হে আল্লাহ! আপনার নিকট কৃপণ ও অলসতা থেকে পানাহ চাই’।
উল্লিখিত কুরআন হাদিস সামনে রেখে আমরা বলতে পারি ভয়াবহ দুঃখ সংবাদ হলো তাদের জন্য যাদের সামর্থ্য থাকার পরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। সুতরাং বর্তমান সুগন্ধার তীরে যেই মানবিক বিপর্যয়। সেই বিপর্যের রেশ ছড়িয়ে পড়ছে ঝালকাঠি বরিশাল বরগুনা বেতাগীসহ আরো বহু এলাকায়।
আসুন! নিজে পাশে দাঁড়াই। অন্যকে পাশে দাঁড়াতে উৎসাহ দিই। আল্লাহ আমাদেরকে মানবিক এই বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরার তৌফিক দান করুন, আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আবুল কালাম আজাদ ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৫১ পিএম says : 0
পাপে জর্জরিত আমাদের অন্তর, ভুলে গেছি আমাদের সৃষ্টি কর্তা কে, ভুলে গেছি রাসুল সাঃ আদর্শ, যে যেমন চলছি, যে যেমন কাজ করছি, লঞ্চ আগুন এটা কি দুর্লব ঘটনা নয়, কেনো এমন হয়, এগুলো হবার কারন পাপের ফসল, দেশ থেকে ইসলাম ইমান উঠে যাচ্ছে ইসলাম ও ইমানের যায়গায় স্থান পাচ্ছে বেদায়েতি নাফরমানী, আমাদের সৃষ্টির কথা গুলো ভুলে যাওয়ার কারনেই যত আজাব গজব ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে, আল্লাহ আমাদের ইমানের হেফাজত করুন।।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন