ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের অনেক সুন্দরের অন্যতম একটি হচ্ছে সবুজের মধ্যে ঝুলন্ত হলুদ কমলা। দূর থেকে দেখলে দার্জিলিংয়ের মতো দেখায়। বাস্তব না হলেও এমন দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে দার্জিলিং এসেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। দশ বছর আগে শখের বশে আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম ওরপে জুয়েল দার্জিলিং জাতের কমলার গাছ লাগান।
গাছে কমলা ঝুলতে দেখে জুয়েল এক পা দুই পা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কমলার এমন দৃষ্টিনন্দন বাগান যিনি দেখেন তিনিই বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়েই দেখতে পাই এক টুকরো দার্জিলিং’। ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের জুয়েল হর্টিকালচার থেকে কয়েকটি চারা কিনে জমিতে রোপন করের। দুই বছরের মাথায় আশানুরুপ ফল হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে বাগানে তিন শতাধিক কমলা গাছ রয়েছে।
বাগানে উৎপাদিত কমলা স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরন করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই কমলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টি। যারা ইতিপূর্বে দার্জিলিংয়ের কমলা খেয়েছেন; তারাই বলছেন কোন পার্থক্য নেই। তিন শতাধিক গাছের বাগানে প্রতিটি গাছে ৮০০ থেকে ৯০০ কমলা ধরেছে। শীত শুরুর সাথে সাথে সুমিষ্ট এই ফল বিক্রি চলছে। কমলা কেনার জন্য দূর দূরান্ত থেকে ফল ব্যবসায়ীরা বাগানে আসছেন। বাগানে প্রতি কেজি কমলার দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
জুয়েল জানান, তিনি কমলার বাগানের পাশাপাশি চারাও উৎপাদন করছেন। আর সীমান্ত এলাকায় কমলার বাগান গড়ে উঠায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও পরামর্শ নিতে রোজই আসে। কমলার বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী মাসুদ হাসান বলেন, শহর থেকে এসেছি। কমলা বাগান দেখে মনে হচ্ছে এ যেন বাস্তবের দার্জিলিং। দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি সে কথাই বলছে এই বাগান।
আরেক দর্শনার্থী মো. রাশেদ বলেন, পরিবার নিয়ে কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলা বাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি। বাস্তবে পুরো বাগানেই প্রতিটি গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখে সুন্দর লাগছে। কমলা মুখে দিয়ে খুবই খুশি।
কমলা বাগান ঘুরতে এসে নিজেদের ভালোলাগা ফ্রেমে ধরে রাখতে ছবি তুলেন। তাদের কথা, নিজেদের জেলায় এমন বাগান দেখে মুগ্ধ। পাহাড়ের চা পঞ্চগড়ের সমতলে। আর দার্জিলিংয়ের সুমিষ্ট কমলা ঠাকুরগাঁওয়ে। এমন দৃশ্য চিরদিন থাকুক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেখুক বাংলা জমিনে সত্যি সোনা ফলে।
কমলা বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত নরেন মোহন ইনকিলাবকে জানান, তারা ১০ জন নিয়মিত কাজ করেন। কমলার বাগান তাদের জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। পরিবার নিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছে। আর প্রতিদিনই হাজারের বেশি মানুষ বাগান দেখতে আসেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে এমন বাগান করার জন্য মালিক জুয়েলের কাছ থেকে পরামর্শ নেন।
দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ করে এখন ফুরফুরে মেজাজে আছেন জুয়েল। তিনি জানালেন, এবার বাগান থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার মেট্রিক টন কমলা উৎপাদন হবে। বাগান দেখার জন্য হাজারের বেশি লোক আসায় তিনি খুশি। বমেনটি হয়েছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের কারনে। বাগান দেখতে এসে যারা আগ্রহ দেখান তারা যদি কমলার বাগান করেন তাহলে কৃষিতে সত্যি সত্যি বিপ্লব ঘটবে। আর কমলা আমদানি করতে হবে না।
ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে এক হাজার ৩২টি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলার পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের সাতটি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন