গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। গত শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি। এইচআরএফবির বিবৃতিতে বলা হয়, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সদস্যদের থানায় ডেকে পাঠানো, বাসায় গিয়ে নানাভাবে জেরা করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে সাদা কাগজে বা পূর্ব থেকে লিখিত বক্তব্যে স্বাক্ষর নেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে।
আরও জানা যাচ্ছে, পরিবারগুলোকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে তাদের অবস্থান বা বক্তব্য পরিবর্তন করে উক্ত ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলে উল্লেখ করার জন্য। এ ছাড়া, পরিবারগুলোতে তথ্য গোপন করারও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
এ ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি দ্রæততম সময়ে পুলিশের এমন আচরণ বন্ধে নির্দেশনা প্রদান, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে এইচআরএফবি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দুর্দশা আরও বাড়াচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যদিও এটিকে তাদের প্রথাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বক্তব্যের সঙ্গে তাদের এ দাবি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এইচআরএফবির পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- অনতিবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন আচরণ বন্ধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা প্রদান; সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত এবং যাদের নির্দেশনায় হয়রানি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; গুমের শিকার ব্যক্তিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বশেষ দাবি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের দ্রæত ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, জোরপূর্বক অন্তর্ধান থেকে সব নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর ও সে অনুযায়ী জাতীয় আইনি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা।
এইচআরএফবির এক্সপার্ট ড. হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (বøাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের (বিএমপি) সভানেত্রী ড. ফওজিয়া মোসলেম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নিজরা করির সমন্বয়ক খুশি কবির, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের (স্টেপস) নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির (বিএসডবিøউএস) নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) নির্বাহী পরিচালক সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ দলিত অ্যান্ড এক্সক্লুডেড রাইটস সোসাইটির (বিডিআরএম) চেয়ারপারসন মনি রানী দাস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, ফেয়ারের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, কর্মজীবনী নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবী, নারীপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোসাম্মদ মাহমুদা বেগম, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ডিজাবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশনসের (ন্যাডপো) আবদুস সাত্তার দুলাল, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নেসা মিষ্টি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন