তাকওয়া কুরআনের শব্দ। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ পরহেজ করা, বিরত থাকা, বেঁচে থাকা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো- একমাত্র আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকে, তাকে মুত্তাকি বলা হয়। ঈানদারের মহৎ গুণাবলির মধ্যে তাকওয়া হচ্ছে অন্যতম। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে, সে পার্থিব জীবনের লোভে কোন খারাপ কাজ করে না। সে পরকালীন জীবনের কল্যাণের কাজে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলো- জীবনের প্রতিটি কাজকর্মে আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা। সকল প্রকার অনিষ্ট কাজ থেকে আল্লাহর ভয়ে নিজেকে বাঁচানোর নামই হলো- তাকওয়া। তাকওয়ার মধ্য দিয়ে একজন মুমিন পরিশুদ্ধতা লাভ করে, ঈমানশুদ্ধতার আত্মিক সুখ-শান্তি লাভ করে। তৌহিদের উপস্থিত প্রফুল্লতায় ভরে উঠে জীবনের চারিধার। তাই একজন মানুষকে মানুষ হতে হলে সর্বাগ্রে তাকে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহর ভয় যদি সদা অন্তরে জাগ্রত না থাকে, তাহলে তার দ্বারা ভালো কাজের আশা করা যায় না। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দুর্নীতি করা যায়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যায়, দায়িত্বে অবহেলা করা যায়, আমানতের খিয়ানত করা যায়- কিন্তু আল্লাহর চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। তাই প্রতিটি মানুষের তাকওয়া অর্জন করা অপরিহার্য। তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। মুত্তাকিদের পরিচয় প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈানদারগণ তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর (আলে ইমরান- ১০২)
তাকওয়া দৃশ্যমান কোনো বস্তু নয়। এটা মূলত মানুষের আভ্যন্তরীণ গুণবিশেষ। তাকওয়ার স্থান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি এখানে থাকে, এ কথা বলে তিনি তিনবার নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। তাকওয়া যেহেতু অন্তরে থাকে, তাই রাসূল (সা.) অন্তর পরিষ্কার করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মনে রেখো! নিশ্চয়ই মানুষের দেহে একটি গোশতের টুকরো আছে, যা ঠিক থাকলে সমস্ত দেহই ঠিক থাকে। আর তার বিকৃতি ঘটলে সমস্ত দেহেরই বিকৃতি ঘটে। আর তা হচ্ছে অন্তর বা কলব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে শিরক, কবিরা গোনাহ, অশ্লীল কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকি বলা হয়”। মুত্তাকি ব্যক্তি সততা, আমানতদারিতা, ধৈর্য, শোকর, আদেল-ইনসাফ সব ধরণের গুণে গুণান্বিত হন।
তাকওয়া অবলম্বনের উপকারিতা: তাকওয়া অবলম্বনকারীকে আল্লাহতায়ালা পরিমিত রিজিক দান করেন, যে কেউ আল্লাহতায়ালার ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার জন্য সঙ্কট থেকে উত্তোরণের কোনো পথ তৈরি করে দিবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দিবেন যা তার ধারণারও বাইরে। (সূরা তালাক: ২)
কেউ তাকওয়া সম্বলিত সুন্দর চরিত্র নির্মাণ করতে পারলে তার রিজিকের অভাব হবে না। এই আয়াত থেকে এটাই প্রতিয়মান হয়। তাকওয়া অবলম্বনকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর অফুরন্ত ভালোবাসা। আল্লাহ বলেন, নিশ্চিয় আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান: ৭৬)। তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দার আমল ইবাদত কবুল হয়। (সূরা মায়িদা: ২৭) । তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দার কোনো ভয় থাকবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এবং নিজেকে সংশোধন করেছে কিয়ামতের দিন তার কোনো ভয় নেই এবং কোনো দুশ্চিন্তাও তাকে গ্রাস করবে না। (সূরা আরাফ: ৩৫)। তাকওয়া অবলম্বনকারীর কাজ আল্লাহ সহজ করে দিবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে তাকওয়া অবলম্বন করলো, আল্লাহ তার জন্যে কাজগুলোকে সহজ করে দিবেন। (সূরা তালাক: ৪)
তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দার জন্যে জমিন ও আসমানের বরকতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি এলাকার লোকজন ঈমান আনয়ন করতো এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি আল্লাহ তাদের আসমান ও জমিনে বরকতের দরজাসমূহ খোলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে (আমার আয়াতকে) তাদেরকে আমি পাকড়াও করবো তাদের অর্জিত পাপের কারণে। (সূরা আরাফ: ৯৬) কুরান হাদিস গবেষণা করলে দেখা যায়, তাকওয়ার ক্ষেত্র পরিধি সীমাহীন বিস্তৃত। এটি যেকোনো ধরণের পাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করে, সব মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে। প্রবৃত্তির খেয়ালখুুশি ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দার ভেতরে হক-বাতিল বুঝার ও পার্থক্য করার বিবেক সৃষ্টি হয়। সত্য-মিথ্যা অনুধাবন করা যায়। তাকওয়া জীবনকে এমন এক ভিত্তির ওপর স্থাপন করে, যা সব ধরণের ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচণা, প্রতারণা, প্রলোভন, পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন