শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মুমিন ভাবনায় নতুন বছরে করণীয়

হাসানুল বান্না অলি | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

নববর্ষ বা নতুন বছর বারো মাস পরপর আসবে।আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেন। ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারোটি’ (সুরা তাওবা : ৩৬)। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত তিনটি নববর্ষ আসে।বাঙালি হিসেবে বাংলা নববর্ষ নানান আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালিত হয়।আর দ্বিতীয় টি হলো আরবি নববর্ষ যা আরবি বছরের শুরুতে পালিত হয় আর সর্বশেষ ইংরেজি নববর্ষ যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়।

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম জুলিয়াস সিজার ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল। প্রাচীনকালে নববর্ষের প্রথম দিন মন্দ অভ্যাস পতিত্যাগ ও ভাল ও সুন্দর অভ্যাস অর্জনের প্রতিজ্ঞা করা হতো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তারিখে নববর্ষ পালন করা হতো।।ইরানে নববর্ষ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত। প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জমশিদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নববর্ষের প্রবর্তন করেছিলেন। মেসোপটেমিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষুবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রিকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালের পর ১ জানুয়ারি। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ।এভাবেই চলতে থাকে নববর্ষের উৎসব ।
সর্বশেষ খ্রিস্টানদের ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরির নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করা হয় ওই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারিকে পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। নববর্ষ বা নতুন বছর মানে গত এক বছরের হিসাব কষে নতুন বছরে নতুন নতুন ভালো কাজ ও সুন্দর পরিকল্পনা নেওয়া।সুন্দর কাজ দিয়ে জীবনকে সাজাতে হবে।একজন প্রকৃত মুমিন এটাই দেখবে যে, দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে এ বছর সে কী হারিয়েছে আর কি পেয়েছে? তার ইহলৌকিক অবস্থা বা বৈষয়িক অবস্থায় কি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।আর কি কি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিগত বছরে কি কি ভালোকাজ করেছে আর এবছর যেন আরো বেশি ভালোকাজ করতে পারে সেই চেষ্টায় সে নতুন বছরকে বরণ করে নিবে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং বিশেষ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে। সে বিগত বছরে কি কি ভালোকাজ করেছে আর এবছর যেন আরো বেশি ভালোকাজ করতে পারে সেই চেষ্টায় সে নতুন বছরকে বরণ করে নিবে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং বিশেষ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে। নিজেদের দুর্বলতার জন্য মহান আল্লাহ তায়া’লার দরবারে এই দোয়া করতে হবে, হে আল্লাহ! আমাদের আগত বছর যেন বিগত বছরের ন্যায় আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল না হয় বরং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সময়,প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ ও পদচারণা যেন হয় একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য।
ইমাম আযম আবু হানিফার (রহ.) দাদা তার পিতাকে পারস্যের নববর্ষের দিন আলী (রা.) এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। তখন আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যোমে নতুন করে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। আমাদের বছর যদি শুরু হয় ভালো কাজ আর তাহাজ্জুদের মধ্য দিয়ে তবেই নতুন বছর আমাদের জন্য তথা সারা বিশ্বের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
করোনায় জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিলেও যুগ বা সময়ে গালি বা দোষারোপ করক জায়েজ নেই। কারণ যুগ বা সময়ের সঙ্গে কোনো অমঙ্গল বা অকল্যাণের সংযোগ নেই। কল্যাণ-অকল্যাণ ও মঙ্গল-অমঙ্গল মানুষের কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা (কাল) সময়কে দোষারোপ কোরো না, কালকে গালমন্দ কোরো না; কারণ, আমিই মহাকাল, আমিই সময়ের পরিবর্তনকারী।
নতুন বছর আসা মানে জীবন মানে জীবনের নির্ধারিত সময় থেকে একটি বছর যাওয়া। আর জীবন থেকে এক বছর চলে যাওয়া মানে মৃত্যুর কাছাকাছি আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। তাই নতুন বছরে মৃত্যুর স্মরণ ও পরকালের প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া কারণ আমরা দিনদিন মৃত্যুর কাছাকাছি আগাচ্ছি। নতুন বছরের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো জীবনের হিসাব গোছানো। আল্লাহ হিসাব নেওয়ার আগে নিজের জীবনের হিসাব গুছিয়ে নিতে পারলেই জীবনের পরবর্তী ধাপে ভালো কিছু করা সম্ভব। মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তার খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন।তিনি বলেছিলেন, ‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।
নববর্ষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করা।পশ্চিমা সংস্কৃতিকে লালন করে নতুন বছরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো বা বিগত বছরকে বিদায় জানানোর সঙ্গে ইসলামের ইবাদত-বন্দেগি, রীতি-নীতি বা সভ্যতা-সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।
‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ পালন বা এজাতীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতির অংশ, যা মুসলমানদের জন্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আবু দাউদের হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩৩)। অশ্লীলতা,অনর্থক কাজকর্ম পরিহার করাও নববর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।বিগত বছরে যে যে বেহুদা কাজ হয়েছে সবগুলোকে হিসাবের আওতায় এনে আগামী বছরের নতুব পরিকল্পনা হাতে নেওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন