ইউক্রেনে বড় ধরনের সংঘাতের সুযোগ প্রশমন করতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ‘খোলামেলা’ আলোচনা করেছে। শুক্রবার জেনেভায় রুশ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে দুই মন্ত্রীই ‘খোলামেলা’ আলোচনার কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইউক্রেন সীমান্তে রুশ বাহিনীকে ইউক্রেন দখলে কাজে লাগানোর কথা অস্বীকার করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, যে কোনও আক্রমণের ভয়াবহ পাল্টা জবাব দেবে। আট বছর আগে তীব্র যুদ্ধের পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিরাট অংশ রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভঙ্গুর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগে এই সংঘাতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ও অন্তত ২০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালন। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কোনও পদক্ষেপ নিলে য্ক্তুরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে লিখিতভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে পারে ওয়াশিংটন। এরপর বিস্তারিত আলোচনা হবে। ইউক্রেন সীমান্তের কাছে প্রায় ১ লাখ সেনা মোতায়েন করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের কাছে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত না করা। তিনি চান, পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট পূর্ব ইউরোপে সামরিক অনুশীলন ও সেনা পাঠানো বন্ধ করুক। এটিকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি। শুক্রবারের জরুরি আলোচনাকে ‘খোলামেলা ও বাস্তব’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্লিনকেন। আর ল্যাভরভও বলেছেন, অর্থপূর্ণ সংলাপ হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি উত্তেজনা কমবে। ব্লিনকেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন দখল করলে ঐক্যবদ্ধ, দ্রুত ও গুরুতর পাল্টা পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে রাশিয়াকে। অপর এক খবরে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেছেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন হবে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। এমনটি ঘটবে না বিশ্বাস রয়েছে তার। গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনে কোন ধরনের সামরিক আগ্রাসন চালানো উচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে কূটনীতি হচ্ছে সমস্যা সমাধানের উপায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটি ঘটবে না এবং আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি আমার ধারণা সঠিক হবে।’ এ সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনীতিকদের প্রচেষ্টার মাঝখানে গুতেরেস আর কোন আলোচনার বিষয় বিবেচনা করবেন না। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে কোন দেশের যেকোনো ধরনের আগ্রাসন হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।’ গুতেরেস বলেন, ইউক্রেন প্রশ্নে এক পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ন্যাটো মিত্র এবং অপরপক্ষে রাশিয়ার অংশগ্রহণে আলোচনা হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ অংশ নয়। তবে তিনি বলেন, তার বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন উত্তেজনা হ্রাসে মধ্যস্থতায় সহায়তা করতে ‘সব সময় প্রস্তুত’ রয়েছে। সামরিক সংঘাত এড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ রয়েছে।’ এদিকে, রাশিয়ার সাথে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশটির ক্রিমিয়া সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। শুক্রবার ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য দিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ইয়েনি শাফাক। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, ‘ক্রিমিয়া সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের খেরসন এলাকায় দেশটির সেনাবাহিনী তাদের সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এ সামরিক মহড়ায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বিএম-২১ গ্রান্ড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম ব্যবহার করেছে।’ এ ক্রিমিয়া অঞ্চলটি ২০১৪ সালে জয় করে নেয় রাশিয়া। আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল সম্পূর্ণ অবৈধ। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আরো বলেছে, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে এ সামরিক মহড়া চালানো হয়েছে। পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব নিরসনে কূটনীতিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, এরপরেও সবার চোখ রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত ও যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন অঞ্চলে রয়েছে। কারণ, রাশিয়া তাদের ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। রাশিয়ার এ পদক্ষেপ নিয়ে পশ্চিমাদের শঙ্কা হলো, রাশিয়া আবারো ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাবে। যদিও ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া। এছাড়া রাশিয়া বলেছে যে তারা সামরিক মহড়া চালাতে এসব সেনা মোতায়েন করেছে। বিবিসি,এএফপি, ইয়েনি শাফাক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন