শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অটোরিকশা ভাড়া নৈরাজ্য

রাজধানীতে সিএনজিচালিত অবৈধ অটো ৩০ হাজার মিটারে চলে না-ফন্দিতে বেশি ভাড়া-যাত্রী হয়রানি

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভাড়া বৃদ্ধির পরও গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। বিভিন্ন পরিবহণে চলাচল করা যাত্রীদের কোনো ক্ষেত্রেই যেন ভোগান্তির শেষ নেই। পদে পদে ঠকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া। বিআরটিসি কিলোমিটার অনুপাতে ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও ভাড়া আদায়ে চলছে নৈরাজ্য। রাজধানীতে যারা নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশায় চড়েন তাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। সরকারের বেঁধে দেয়া আইন মিটারে কেউ চলেন না। অথচ নানান ফন্দিতে সিএনজি ভাড়া বেশি নেন চালকরা। ঠিক সময়ে সিএনজি অটোরিকশা না পাওয়া, অন্যান্য পরিবহনের সঙ্কট, যানজটসহ নানা করণে যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সুযোগে সিএনজি অটো চালকরা ভাড়া বেশি নেয়ার চেষ্টা করে। চালকদের শর্ত মেনেই সিএনজি অটোতে চড়তে হয় যাত্রীদের।

জানা যায়, রাজধানীতে ১৩ হাজার বৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশার পাশাপাশি চলছে অবৈধ ৩০ হাজার। মনিটরিং না থাকায় রাজধানীজুড়ে নৈরাজ্য চলছে সিএনজি-অটোরিকশার চালকদের। সিএনজি-অটোরিকশায় কোনো বিশেষ নজরদারি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মিটারে চলাচলের বিষয়টি মাঝে মাঝে দেখে। যাত্রীদের জিম্মি করে চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। মিটার থাকলেও চুক্তিছাড়া নড়েন না একজনও। যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়ার হাজারো অজুহাতও রয়েছে তাদের। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিটারের রেটে যেতে চান না চালকরা। প্রতিটি সিএনজি অটোতে মিটারটি যেন শোকেসে সাজানো কোনো বস্তু। প্রতিটি সিএনজি অটোতে মিটারে লাল বাতিতে মূল্য লেখা আছে কিন্তু নেই কোনো কার্যকারিতা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ও কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সিএনজি অটো চালকদের হাতে তাদের নাজেহাল হতে হয়। ঝগড়া-বাগবিতণ্ডা নিত্যদিনের ব্যাপার। সাদা রঙের ব্যক্তিগত মালিকানার সিএনজি অটোরিকশায় লেখা থাকে প্রাইভেট। এসব সিএনজিতে যাত্রী পরিবহণের অনুমতি নেই। কিন্তু ইচ্ছেমতো ভাড়ায় তাতেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার চালকদের দাবি-পুলিশকে খরচ দিয়েই তারা সিএনজি চালান। সাদা রঙের প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার চালকরা কোর্ট থেকে যাত্রী চলাচলের অনুমোদন নিয়েছেন বলে জানালেও কিন্তু তারা এধরনের কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।

সিএনজি অটোরিকশা চালক শাহাদাত হোসেন বলেন, সারা দিনের একটি গাড়ির জমা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। মিটারে গাড়ি চালালে পোষায় না। মিটারতো শুধু গাড়িতে এমনিতেই লাগানো হয়েছে। এখন মিটারের কোনো কাজ নেই। যাত্রীরাও মিটারের হিসেবে যেতে চায় না। মিটারে গাড়ি চালালে যাত্রীদের সাথে আমাদের প্রত্যেক দিন ঝগড়া হয়। সরকারের দেয়া মিটারের নিয়ম মেনে চললে আমাদের পেটের ভাত জুটবে না। সিএনজি চালিত অটোরিকশা গাড়ির দৈনিক জমা তো আর মালিকরা কম নেন না। কোনো কোনো যাত্রী একটু বেশি ভাড়াতেই সিএনজিতে চলাচল করেন। আমরাতো আর জোর করে ভাড়া বেশি নেই না।

সজল নামের আরেক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, মিটারে গেলে পোষায় না। প্রতিদিন এক হাজার ২০০ টাকা জমা দিতে হয়। সব খরচ শেষে ১০০০-১২০০ টাকা নিয়ে বাসায় ফেরা যায়। কোনো কোনো দিন এর কম বেশি হয়। মালিকও তো সরকারের বেঁধে দেয়া জমার নিয়ম মানেন না। মিটারে চালালে সারা দিনেও জমার টাকা উঠবে না। সিগন্যালে আটকা পড়লে সারা দিনের লাভ শেষ। দিনে কয়েকবার নিতে হয় গ্যাস। গ্যাস নিতে দীর্ঘ লাইন পার হতে হয়। মাঝে মাঝে বেশি টাকা দিয়ে গ্যাস নিতে হয়।

আরেক সিএনজি চালক শামসুদ্দিন বলেন, করোনার কারণে সিএনজিতে যাত্রী এখন আগের মতো নেই। কিছুটা কমেছে। ভাড়া আগের মতো থাকলেও মিটার সিস্টেম চলে না। চুক্তিতেই যাত্রীরা যেতে চান। তবে আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে চুক্তির বেশি ভাড়া নেই না। মিটারে গেলে আমাদের লস হয়। মাঝে মাঝে মিটারের চেয়ে হয়তো ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি নেয়া হতে পারে।

রাশেদুল আলম নামের যাত্রী বলেন, মতিঝিল থেকে গুলশান যেতে ভাড়া চাওয়া হয় ৪০০ টাকা। মিটারে যাবেন কিনা জানতে চাইলে গন্ত্যবে যেতে রাজি হন না চালক। কিন্তু আমার সঠিক সময়ে সেখানে যেতে হলে চালকদের কথা মতোই যেতে হবে। যাত্রীদের নিয়ে কেউ ভাবে না। চালকরা যেভাবে ইচ্ছা দাম চায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলছে নাকি চুক্তিতে, বিষয়টি দেখার জন্য কখনো দায়িত্বশীল কাউকে রাস্তায় দেখিনি। পুলিশও এখন আর যাত্রীদের কাছে জানতে চায় না চুক্তিতে না মিটারে যাচ্ছে।

সিনথিয়া জামান যাবেন মিরপুর-১। পল্টন থেকে তার কাছে ভাড়া চাওয়া হয় ৪৫০ টাকা। কিন্তু মিটারে যেতে বললে চালক যাবেন না বলে দিয়েছেন। এখন তাকে ওখানে বাসে যেতে সময় লাগবে বেশি তাই অনেক অনুরোধ করে ৪০০ টাকায় রাজি করিয়েছেন। তবে যাত্রী হিসেবে কোনো মূল্যায়ন নেই বলে তিনি জানান। শুধু টাকারই মূল্যায়ন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশাগুলো নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলছে। সিএনজি-অটোরিকশার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নিয়ম থাকলেও কার্যকর নেই। সিএনজি চালিত অটোরিকশা সেক্টরটি ছোট হলেও এখানেও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের কাছেও সরকার অসহায়। সেই সুযোগ নিচ্ছে মালিক ও চালকরা। ভাড়া বাড়ানো হলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। মিটারে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও চালকরা তা প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন