২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে এর আগে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়ে র্যাবকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনী থেকে সরিয়ে দেয়ার আবেদন করেছে। গত ২০ জানুয়ারি সেøাভাকিয়ার এমপি স্টেফানেক ইভান মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার, র্যাব এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে চিঠি দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল জাতীয় সংসদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী মাসে সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিবৃতি দেয়ার পর আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বির্তক শুরু হয়েছে। নেটিজেনদের মধ্যে সরকারি দলের সমর্থকরা এক ধরনের মন্তব্য-বক্তব্য দিচ্ছেন; সরকারের বিপক্ষের ব্যাক্তিরা উল্টো বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে নেট দুনিয়ায় রীতিমতো সাইবার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অপরের বিরুদ্ধে মার্কিন দেশে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দোষের কিছু নয়। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা আর দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা এক জিনিস নয়। তাদের বক্তব্য- সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রথমে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতে না পারায় পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে ঘোলাটে করেছেন। সরকারের উচিত মানবাধিকার বিষয়ে নিজেদের শুধরে নেয়া এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। শুধু প্রতিপক্ষ্যের ওপর দোষারোপ করে আলোচনা চালালে কোনো সুফল আসবে না। বরং সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশনগুলোর প্রতিদিন টকশোতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এতে ‘নানা মুনির নানান মত’ প্রকাশ পাচ্ছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যু নিয়ে দেশের গুণীজন হিসেবে পরিচিত নির্বাচন, রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর একটি বক্তব্য নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি জানিয়েছেন শুধু র্যাবের ৭ কর্মকর্তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের ৩৩৭ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির তালিকা করেছেন। পর্যায়ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ভয়ঙ্কর। এই নিষেধাজ্ঞা দেশ, সরকার, পুলিশ বাহিনীর শাখা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এ নিষেধাজ্ঞায় সারাবিশ্বে সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় পৌঁছাতে চান। কোনো সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্র তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরাও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব। আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। তবে এটা ঠিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া বা আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা অতি সহজ কাজ নয়। বাংলাদেশের ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা একদিনে গবেষণা প্রসূত ফল নয়। দীর্ঘ দুই বছর ধরে তারা খোঁজখবর নিয়ে গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যে তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটাকে খণ্ডন করতে হবে। মানবাধিকার লংঘনের ওই তথ্য-উপাত্ত খণ্ডানো দু-চারটি বৈঠকে সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র্যাবের ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর পরিস্থিতি যেখানে চলে গেছে; আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের সম্ভাবনা কম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বার বার বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকার লংঘন, গুম নিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সরকার শোনেনি বরং আরো বেপরোয়া হয়েছে। এমনকি মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিল। সরকার তাদের পাত্তাই দেয়নি; ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে আরো বেপরোয়াভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে। এমনকি যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের কাঁদতে পর্যন্ত দেয়নি। বতর্মান সরকার মনে করেছিল দিল্লি পাশে থাকলে য্ক্তুরাষ্ট্রের ওসব অভিযোগ কিছুই না; মোদি সামলে নেবেন। পাশাপাশি ঢাকার সরকার যুক্তরাষ্টের সরকারকে বোঝাতে চেয়েছে তারাই কেবল বাংলাদেশে জঙ্গি জমন করতে পারে; বিএনপি বা অন্য কোনো দলের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার মানবাধিকার লংঘন, খুন-গুম বন্ধ করেনি। দিল্লির ওপর থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্র চৌকিদারির দায়িত্ব তুলে নিয়ে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশকে আর ভারতের চোখে দেখা হবে না। তখনই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। শুধু তাই নয় আলোচনা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে আরো কঠোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসেস কালকে হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব। আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমেরিকার সরকার র্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এটা দেয়া হয়। অপপ্রচারের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য- অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি; সেই সঙ্গে পৃথিবীর বড় বড় মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করছে যে ‘র্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান। র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং টেরোরিস্টের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই স্বয়ং আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। নিষেধাজ্ঞার পর পরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভ ছিল। আগামী মাসেই (ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ সংলাপ কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি সংলাপ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টনারশিপ। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব, আমার বিশ্বাস র্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র্যাবকে বাদ দিতে কতিপয় এনজিওর চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা বলেছেন বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানের কাছে প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তাদের ভাষায় বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে, মানবাধিকার লংঘন করেছে। এ জন্য তারা বাংলাদেশের র্যাবকে পিস কিপিংয়ে না নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছেন। দুই মাস হলো জাতিসংঘ এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে ইউএন’র স্পোক পার্সন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যখনই কাউকে পিস কিপিংয়ে নেয়, তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে কাজটি দেয়’। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে এই চিঠি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস অপপ্রচারণা এবং দূরভিসন্ধিমূলক এসব কাজ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ এনে র্যাবের সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। এক বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধে অংশ নিয়ে র্যাব আইনের শাসন ও মানবাধিকার খর্ব করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ এতে হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে তাদের একজনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
ওই নিষেধাজ্ঞায় আরো বলা হয়েছে, ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে গত বছর (২০২১) ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন্স এবং রিলেটেড প্রোগ্রাম অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স অ্যাক্টের ৭০৩১(সি) ধারার অধীনে বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে বলেও বলা হয়। র্যাবের সাবেক ডিজির দায়িত্বে থাকার সময় সংঘটিত মানবাধিবার লংঘনের জন্য বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। র্যাবের সাবেক ও বর্তমান মোট ৬ কর্মকর্তাকে নির্বাহী আদেশে ‘ফরেন এনটিটি’ বা বিদেশি হিসেবে অভিহিত করে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। র্যাব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ হুমকিতে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২০০৪ সালে বাংলাদেশে র্যাব গঠন করা হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়। এনজিওগুলো অভিযোগ করেছে যে, ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ৬০০ গুমের জন্য দায়ী র্যাব এবং বাংলাদেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারীরা। ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে। কোনো কোনো রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব ঘটনায় টার্গেট করা হয়েছে বিরোধীদলীয় সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের।
১২ মানবাধিকার সংস্থার চিঠি : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ১২টি মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাগুলো জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়ারকে চিঠি দেন। গত ২০ জানুয়ারি মানবাধিবার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারিকে এই চিঠি পাঠানো হয়। তবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই চিঠির আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর দেয়া হয়নি।
চিঠিতে সই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশেন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসাপিয়ারেন্সেস (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা, ১২টি নিম্নস্বাক্ষরকারী সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানাচ্ছি যে, জাতিসংঘের ২০১২ সালের পলিসি অন হিউম্যান রাইটস স্ক্রিনিং অব ইউনাইটেড ন্যাশন পারসোনেল বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’ আরো বলা হয়, ‘আপনি জানেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ সেনা ও পুলিশ মোতায়েনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২০ সালে দেশটি বিভিন্ন মিশনে ৬ হাজার ৭৩১ জন ইউনিফর্মধারী কর্মী মোতায়েন করে সর্বোচ্চ অবদান রাখে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠি : মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার, র্যাব এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি সেøাভাকিয়ার এমপি স্টেফানেক ইভান বাংলাদেশে আইনের শাসন না থাকা, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলোর উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করেছেন। স্টেফানেক ইভান ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক সাব-কমিটির সদস্য। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। চিঠিতে তিনি সম্প্রতি র্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো লিখেছেন, উল্লিখিত বিষয়ে আমি আপনার কাছে অনুরোধ করব, আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সংক্ষেপে র্যাব-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে সহায়ক হোন। আমি বাংলাদেশ পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ায় সাহায্য চাইছি। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল মাঝে মাঝেই অমানবিক ‘প্র্যাকটিস’ ব্যবহার করে, যা এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট করেছে। এর মধ্যে আছে নির্বাচনের ফল জালিয়াতি করা অথবা রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন-পীড়ন করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন