সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রোববার অনলাইনে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের যোগান অব্যাহত রাখবে। সুষ্ঠভাবে লোড ব্যবস্থাপনা করা হবে। প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেচ মৌসুমে এ চাহিদা আরো বাড়ে। চাহিদা যতই বাড়ুক নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চাহিদা মতো প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি হতে সেচ মৌসুম শুরু হয় যা ৩১ মে পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, গত সেচ মৌসুমে মে মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪০৯৭ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে তা ছিল ১১৯৭৭ মেগাওয়াট। চলতি (২০২২) সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ১৫৫০০ মেগাওয়াট। সেচের মৌসুমে গ্যাসের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক ১৬০০মিলিয়ন ঘনফুট, ফার্নেস অয়েলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ৭০৫০০ মেট্রিন টন ও ডিজেলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ৩০৭০০ মেট্রিন টন। শুধু সেচের জন্য ২০২১ সালে বিদ্যুৎ লেগেছে ২৩১৫ মেগাওয়াট যা ২০২২ সালের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৩৭৫ মেগাওয়াট।
চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, যে সকল গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা, চলতি সেচ মৌসুমে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় সে বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যোগাযোগ করে জ্বালানি পরিবহণ নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা, সেচে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে অলটারনেট ওয়েট এন্ড ড্রাই পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো, সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রসমূহ সংরক্ষণ ও মেরামত কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা, ওভারলোডেড সাবস্টেশনসমূহ ও সঞ্চালন লাইন আপ গ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নূন্যতম দুই মাসের উৎপাদন সক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিত করা, সেচ মৌসুমে জরুরি সময়ে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/কোম্পানিসমূহ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা, সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন এবং গঠিত মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনাকালে বিপিসি, পেট্রোবাংলা, জন নিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিসি তাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
ভার্চুয়াল এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় অন্যান্যের মাঝে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর চেয়ারম্যান মোহাং সেলিম উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন