স্ত্রীকে হত্যার পর পালিয়ে থাকা স্বামী আসাদুল ইসলাম (২৬)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পারিবারিক কলহ ও দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বৃষ্টি আক্তারকে (২৩) শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যায় আসাদুল। ঘটনার পর কেউ জানত না বৃষ্টি খুন হয়েছে। দুদিন পর বৃষ্টির পরিবারের উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ঘটনার চাঞ্চল্যতায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-৪। গত রোববার রাতে ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪ এর একটি দল। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষ থেকে বৃষ্টি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই দিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই ঘটনায় র্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে হত্যার মূল অভিযুক্ত আসাদুলকে ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বৃষ্টিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত বৃষ্টি আক্তার কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানাধীন এলাকার মেয়ে। ২০১২ সালে বৃষ্টির প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার ৬ বছর ও ৪ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করলে বৃষ্টির সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রথম স্বামী বৃষ্টিকে তালাক দেয়।
ডিভোর্সের পর বৃষ্টি গাজীপুরে তার বোনের সঙ্গে থেকে গার্মেন্টেসে চাকরি করার সময় আসামি আসাদুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ধূর্ত আসাদুল বৃষ্টির আগের স্বামী থেকে ডিভোর্স বাবদ পাওয়া টাকা আত্মসাতে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ২০২০ সালে ১ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বৃষ্টিকে বিয়ে করে।
তিনি বলেন, পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বিয়ের আগে আসাদুল বৃষ্টির প্রতি অনেক যত্নশীলতা ও সহমর্মিতা দেখাত। কিন্তু বিয়ের পরপরই তার রূপ পাল্টে যায়। সে বৃষ্টির আগের স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর প্রাপ্ত অর্থ এবং মাসিক বেতনের ওপর লোভাতুর দৃষ্টি দেয়। বিয়ের পর তারা গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তাদের মাঝে মাঝেই কলহ হতো। ঘটনার দিন ১৩ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে আসাদুল বাসায় ফিরলে বৃষ্টি আসাদের মোবাইলে অন্য নারীর অপ্রীতিকর ছবি ও কথোপকথন দেখতে পেয়ে রাগারাগি করে। একপর্যায়ে আসাদুরের মোবাইল ভেঙে ফেলে। আসাদুলও ক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টির কিস্তির টাকায় কেনা টিভি ভেঙে ফেলে। ঝগড়ার একপর্যায়ে আসাদুল বৃষ্টির গলাটিপে ধরে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে বৃষ্টিকে হত্যা করে। পরে লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়। ঘটনাটি অন্যভাবে সাজানোর জন্য সে ঝুলন্ত লাশ সিলিং ফ্যান থেকে নামায় এবং তার পরিহিত লুঙ্গি দিয়ে মৃত ভিকটিমের মুখ ঢেকে রেখে নিজের মা ও ফুপুকে ঘটনাটি জানিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় আসাদুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন