স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আবর্জনা ও পরগাছা থেকে মুক্ত করতে চাই। এ জন্য আওয়ামী যুবলীগকে সহায়তা করতে হবে।
আগামী ১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তানে হোটেল ইম্পেরিয়ালে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সহায়তা কামনা করেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো.হারুনুর রশীদের সঞ্চালনায় এ বর্ধিত সভা হয়।
এতে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও বর্ণাঢ্যময় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির আদর্শের অনুসারী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার প্রথম কাজ সারাদেশে দলকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা। ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত এবং ২০৪১ সালে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। সেই লক্ষ্যে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমার আপাতত লক্ষ্য আগামী নির্বাচন।
কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে আমাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। আমি আমার সারা জীবনের পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। আওয়ামী লীগে আমার একটি কমিটমেন্ট আছে। আমার সাধ্য ও শক্তি দিয়ে তা পূরণ করার চেষ্টা করবো। আমি কোনো আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করি না।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তাবিজ বা পানি পড়া দিয়ে সংগঠন চালানো যাবে না। কর্মসূচী দিতে হবে। জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সারাদেশে যুবলীগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, কর্মীর কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে নেতা হওয়া গেলেও নেতা থাকা যায় না। এ জন্য নেতা না হয়ে দলের ম্যানেজার হতে হয়। রাজনীতিতে ম্যানেজ করতে হয়। এখানে বাহুবল বা পেশী শক্তির স্থান নেই।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা-লন্ডন দ্বিমুখী কবলে পড়ে বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বিএনপি এখন বক্তৃতা বিবৃতির দলে পরিণত হয়েছে। জিয়াউর রহমান ছিলেন অপরাজনীতির মস্তিষ্ক আর এরশাদ ছিলেন হৃৎপি-। বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সোয়া কোটি ভুয়া ভোট তৈরির কারিগর। আর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের রাজনীতি করছেন। তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
সভায় সংগঠনের ৭৫টি জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণ কম, এ্যাকশন বেশি
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাষণ কম, এ্যাকশন বেশি। এ অ্যাকশন বলতে পজেটিভ অ্যাকশন, নেগেটিভ নয়। ৩ নভেম্বর জেলাহত্যা দিবস উপলক্ষে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের পরবর্তী এজেন্ডা জাতীয় নির্বাচন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের ভালোবাসা অর্জন এবং মন জয় করতে হবে। খারাপ শুদ্ধ ও সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেই এ্যাকশন শুরু হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন সর্বশক্তি নিয়ে নেমে যাবো, জনগণের কাছে যাবো। জনগণকে খুশি করাই আমাদের পরবর্তী এজেন্ডা। যারা আচরণগতভাবে একটু খারাপ, ক্ষমতার অহংকারে জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও অনেকের পা মাটিতে পড়ে না। শুদ্ধ হয়ে যান, সংশোধন করুন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা ভুল করেছেন। তিনি যে এলাকার সেই এলাকার জনগণের কাছে ক্ষমা চান। যারা আমাদের নির্বাচিত করেছে, তাদের কাছে চাইতে আমাদের কোন লজ্জা নেই। কারো খারাপ আচরণের কাছে আমাদের নেত্রীর অর্জনকে জিম্মি করতে পারি না। এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করলে ডিসিপ্লিনারি শাস্তি পেতে হবে। এর জন্য কোন আপোষ নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা আজ আমাদের পার্টির চেয়েও অনেক উচ্চতায়। তিনি যে শক্তি, জনপ্রিয়তায় দেশ চালাচ্ছেন, বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই আওয়ামী লীগকেও জনপ্রিয়, শক্তিশালী, আধুনিক এবং গতিময় করতে হবে। তবেই সরকার যেমন শক্তিশালী তেমন আওয়ামী লীগও শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেন, সরকার শক্তিশালী, আওয়ামী লীগ দুর্বল হলে সরকারের মধ্যে হারিয়ে যাবে। সেটা আওয়ামী লীগের জন্য শুভলক্ষণ নয়। দলের মধ্যে সরকার হারিয়ে যাবে, সরকারের মধ্যে দল হারাবে না। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর এবং ২১ আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। এগুলো ছিল আমাদের নেতৃত্বশুন্য করার সুগভীর চক্রান্ত।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের শুরুতে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিতে শুরু করলে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখন শ্লোগান বন্ধ করুন। সুসময়ে অনেকেই শ্লোগান দেন। গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করেন। দুঃসময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা চোরাইপথে পালিয়ে যায়।
এসময় নেতাকর্মীরা চিৎকার করে বলেন, হাইব্রিড চাই না, হাইব্রিড বাদ দেন। এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এখন এই শব্দ ব্যবহার করবো না, কারণ আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক। ওইভাবে আমি বলতে চাই না, যেটা আমি বলতে চায় তা বলেই ফেলেছি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আমিরুল আলম মিলন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
ঢাবি মধুর ক্যান্টিনে ঝটিকা সফরে ওবায়দুল কাদের
গতকাল মঙ্গলবার হঠাৎ করেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্র রাজনীতির আতুড় ঘর হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এসে ছাত্রলীগের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে এসে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আধা ঘণ্টার আড্ডায় মেতে উঠেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতারা।
স্মৃতিবিজড়িত মধুর ক্যান্টিনের ‘চা’ পান করতে করতে তিনি খোঁজ-খবর নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। ছাত্রলীগ নেতাদের রাজনীতির আগে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়ার তাগিদ দেন সাবেক এই ছাত্রলীগ সভাপতি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন