ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই সম্প্রীতিতে বসবাস করতে পারে। গত দুর্গাপূজায়ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম যার যার, দেশ সবার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যেকোনো মূল্যে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করব। কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেয়া হবে না। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাসিরনগরের এ হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। অভিযুক্তকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে স্থানীয় গৌর মন্দির চত্বরে শামীম এসব কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফ অবমাননার করে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করার প্রতিবাদে মিছিল চলাকালে নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে চার সদস্যর এ প্রতিনিধিদল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠায়। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সংসদের সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু ও মারুফা আক্তার পপি। শামীম দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের মন্দির পুনঃনিমার্ণসহ সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল সকাল ১১টার দিকে নাসিরনগরের গৌর মন্দির, দত্তবাড়ি মন্দির, কালিবাড়ি মন্দির, জগন্নাথ মন্দিরসহ বিভিন্ন বাড়িঘর পরিদর্শন করেন ও আহত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. রাফিউদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা হামিদা লতিফ পান্নাসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল বিকালে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ১১টি মন্দিরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩টি মন্দিরে দশ হাজার টাকার অনুদান তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুর রহমান। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পবিত্র কাবা শরীফের উপর শীব মূর্তি স্থাপন করায় রসরাজ দাসের সর্ব্বোচ শাস্তি এবং নাসিরনগর হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও নাশকতাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে নাসিরনগর প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে শনিবার উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসকে (৩০) আটক করে এলাকাবাসী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাতেই রসরাজের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে রোববার সকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এসময় একদল বিক্ষুব্দ জনতা বেশ কয়েকটি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ,বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন