ওমিক্রনের প্রাথমিক সংস্করণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগের শরীরেই মৃদু উপসর্গ থাকছে বলেই দেখা গেছে। কিছু দিন পরে তারা সুস্থও হয়ে উঠছেন। ওমিক্রন সংক্রমণের গতি চিন্তা বাড়িয়েছিল বিশেষজ্ঞদের। তবে তা দ্বিগুণ করে তুলেছে ইতোমধ্যে ৫৭ দেশে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ বা ভ্যারিয়েন্ট।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ওমিক্রনের এ ‘নতুন’ সংস্করণের সংক্রমণ ক্ষমতা নাকি সহজেই টেক্কা দিচ্ছে প্রাথমিক সংস্করণটিকেও! এমনকি, আগে যদি কেউ মৃদু উপসর্গ সমেত ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলেও যে তিনি নিস্তার পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, তার শরীরে ভবিষ্যতে সংক্রমণ এড়ানোর মতো যথেষ্ট অ্যান্টিবডি না থাকারই সম্ভাবনা বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার করা এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
হু-এর বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভান কেরখোভে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, মারণ ক্ষমতার বিচারে পূর্বের গোত্রেই ‘বিএ.২’ রূপকে ফেলা যেতে পারে’।’ বিজ্ঞানীদের দাবি, ওমিক্রনের এ নতুন রূপের সংক্রমণ ক্ষমতা সহজেই টেক্কা দিচ্ছে প্রাথমিক সংস্করণটিকে! আরো আশঙ্কার কথা শুনিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মঙ্গলবার জানিয়েছে, বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশে ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে নয়া রূপটি।
১০ সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রনের সন্ধান মেলার পর ঝড়ের গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে বাকি বিশ্বে। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ডেল্টাকে সরিয়ে ওমিক্রন ডমিনেন্ট ভ্যারিয়েন্ট (করোনার যে রূপ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে) হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই জানা যাচ্ছে, ওমিক্রনের ‘সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যারিয়েন্ট’ হিসাবে পরিচিত ‘বিএ.২’-এর সংক্রমণ ক্ষমতা ওমিক্রনের প্রাথমিক রূপের চেয়েও বেশি। মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে হু জানায়, তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশে এই রূপের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে।
অনেকেই মনে করছিলেন, ওমিক্রনের ঢেউ কাটিয়ে উঠলেই হয়তো এ অতিমারির কামড় ধীরে ধীরে কমবে। তবে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের প্রকাশিত তথ্য সামনে আসার পর তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত ওই রিপোর্ট বলা হয়েছে, টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া ব্যক্তিরাও ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। ওমিক্রনের প্রাথমিক সংস্করণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগের শরীরেই মৃদু উপসর্গ থাকছে বলেই দেখা গেছে। কিছু দিন পরে তারা সুস্থও হয়ে উঠছেন। তবে চিন্তার বিষয় হল, ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ ছাড় দিচ্ছে না ইতোমধ্যেই ওমিক্রনকে জয় করা ব্যক্তিদেরও। কারণ, এ সংস্করণটির সংক্রমণ ক্ষমতাকে টেক্কা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হচ্ছে না তাঁদের। ফলে ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।
যদিও এখনও এ গবেষণার ‘পিয়ার রিভিউ’ বা পর্যালোচনা বাকি, তা সত্ত্বেও এতে গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। পাশাপাশি ওমিক্রনের সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যারিয়েন্ট হিসাবে পরিচিত ‘বিএ.২’ নিয়েও ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহাগেন-এর একটি রিপোর্ট কপালে ভাঁজ ফেলেছে তাদের।
অন্য একটি পর্যালোচনায় আবার উঠে এসেছে আরো একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝে ডেনমার্কের ৮৫৪১টি পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওমিক্রনের ‘বিএ.২’ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কমপক্ষে ৩৯ শতাংশ মানুষ পরিবারের বাকিদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। ওমিক্রনের আগের সংস্করণের ক্ষেত্রে যা ছিল ২৯ শতাংশ। যদিও এ রিপোর্টটিরও বিস্তারিত পর্যালোচনা বাকি।
এদিকে, অতিমারি পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া মডার্নার টিকা ‘স্পাইকভ্যাক্স’ ব্যবহারের জন্য পূর্ণ ছাড়পত্র দিল আমেরিকার নিয়ামক সংস্থা ‘দ্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)। তবে আপাতত এ অনুমোদন মিলেছে শুধু ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রেই। সূত্র : সিএনবিসি, জাপান টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন