বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এখনই সময় ওবায়দুল কাদেরের

প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘মর্নিং শো’জ দ্য ডে’ ইংরেজি এ বাক্যের ভাবার্থ হলো ‘সকাল দেখেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে’। ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরবিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না কেন সংলাপ হবে’ মন্তব্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘ইতিবাচক’ রাজনীতির বার্তা দিয়েছেন। গতকাল তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতারা ছুটে আসেন। চা খেতে খেতে তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্ররাজনীতির পাশাাপাশি পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। সুশৃঙ্খলভাবে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, একজন ছাত্রের প্রথম কাজ পড়ালেখা করা। এরপর রাজনীতি। রাজনীতিকে কখনোই পড়ালেখার ওপর স্থান দেয়া উচিত নয়। ওবায়দুল কাদেরের ‘মধুর ক্যান্টিন মিশন’ নিছক ছাত্রলীগ নেতাদের খোঁজখবর নেয়া মনে হয় না। এর নেপথ্যে ‘বার্তা’ আছে। নিকটঅতীত যারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তাদের কারো চেয়ে কারো ‘ঔজ্জ্বল্য’ কম ছিল না। প্রবীণ ব্যক্তিত্ব জিল্লুর রহমানের পর আবদুল জলিলের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন জাঁদরেল নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মাঠের রাজনীতিতে ট্রামকার্ড ছুড়েই তিনি ক্ষমতাসীন বিএনপিকে
নাকানিচুবানি খাইয়েছেন। যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ‘পদ’ ছেড়ে চলে গেলেন তিনিও ছিলেন মৃদুভাষী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। কম কথা বললেও তার কথায় ‘ওজন’ ছিল। দলের লোকজন তো বটেই দেশের মানুষের কাছে তিনি ‘ক্লিন ইমেজ’ পরিচিতি পেয়েছেন। তবে ওবায়দুল কাদের অন্য সবার চেয়ে ব্যতিক্রম বৈকি! প্রথম ব্যতিক্রম হলো ওবায়দুল কাদের প্রথম ব্যক্তি যিনি ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এর আগে ছাত্রলীগের কোনো ‘সাবেক’ সভাপতি মূল দলের সাধারণ সম্পাদক হননি। দ্বিতীয়ত, তিনি সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের দিকে নজর দিয়েছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ যে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সব অর্জন’ ম্লান করে দিচ্ছে এটা তিনি হয়তো উপলব্ধি করেছেন। তৃতীয়ত, তিনি সংলাপ সমঝোতার রাজনীতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। চতুর্থত, দলের চাটুকার, হাইব্রিডদের ব্যাপারে স্পষ্ট কথা বলেছেন।
ওবায়দুল কাদের তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক। ধাপে ধাপে তিনি ওপরে উঠেছেন। কলেজজীবনে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। সাংবাদিকতা করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে কয়েকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭৫-এর পর অনেকেই যখন ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খেতে ব্যস্ত তখন মুজিব সৈনিক হিসেবে একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থেকেই তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন; ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেই ওবায়দুল কাদের যখন দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর কিছু ইতিবাচক বার্তা দেন তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এবং দেশবাসীর মধ্যে প্রত্যাশা জাগে। ইংরেজি প্রবাদ ‘মর্নিং শো’জ দ্য ডে’ স্মরণ করেন সাধারণ মানুষ। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের কথাবার্তায় কোনো রাখঢাক নেই। যা বিশ্বাস করেন তা অকপটে বলে ফেলেন। মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর সড়ক, মহাসড়কে ঘুরে বেড়ান। বাসে উঠে ড্রাইভারের লাইন্সেস দেখেন। ভারতীয় বাংলা সিনেমার নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর চরিত্র ‘ফাটাকেষ্ট’-এর ভূমিকায় নিজেকে আবিষ্কার করেন। অঙ্গসংগঠনের নেতাদের তা-বে দেশের মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা; এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যখন নীরব থাকেন; আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতো নেতারা যখন মন্ত্রিত্বের চেয়ারে বসে ছাত্রলীগ নেতাদের ঘরে ঘরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন; আইনের নিজস্ব গতি যখন মুখ থুবড়ে পড়ে; তখনও ওবায়দুল কাদের উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে তার দেয়া কয়েক মাসের বক্তব্যে সে প্রমাণ দেয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে ছাত্রলীগের গত সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘রাজনীতির চেঞ্জমেকার হবেন কারা? চেঞ্জমেকার হবে ছাত্রলীগ। দেশকে বদলাতে হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের উপযোগী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাদের আমি বলব শুধু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ুন। তাহলে রাজনীতি কিংবা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে শিখতে হবে না। মুজিব পরিবারকে জানুন। তাহলে সবকিছু শিখতে পারবেন’। ছাত্রলীগের রক্তারক্তি ও তা-বের কঠোর সমালোচনা করে বিভিন্ন সময়ে তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগকে আর ওষুধ দিয়ে কাজ হবে না প্রয়োজন অপারেশন’, ‘ছাত্রলীগ শুধুই চাঁদাবাজি করে; ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কোনো কথা বলে না’, ‘ছাত্রলীগ কারো আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার নয়’, ‘ছাত্রলীগ নিজেরাই নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে’, ‘ওদের তা-ব দেখে মনে হয় এটা শেখ হাসিনার ডিজিটাল ছাত্রলীগ নয়’, ‘অপরাধ করে ছাত্রলীগ পার পাবে না’, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের আচরণ পরিবর্তন অপরিহার্য’, ‘চামচামি নয় নেতা হতে হলে যোগ্যতা লাগে’ ইত্যাদি। ফলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগের লাগাম টেনে ধরবেন এ বিশ্বাস মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।
ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তা-ব শুরু হয় ২০০৯ সালে। চর দখলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের দখল থেকে ছাত্রদল বিতাড়িত হওয়ায় ক্যাম্পাস নামের চরের দখল নেয় ছাত্রলীগ। অতঃপর শুরু হয় তা-ব। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, জমি দখল, সন্ত্রাস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠেনি। ছাত্রলীগের নাম শুনলেই মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। চাঁদা দেয়ার ভয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা কুঁকড়ে যান। এমনকি নারী ধর্ষণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ছিনতাইয়ের অভিযোগও ওঠে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যন্ত জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রাম সর্বত্রই একই চিত্র। বিশ্বজিৎকে ঢাকার রাজপথে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা থেকে শুরু করে সিলেটের খাদিজাকে পৈশাচিক কায়দায় রক্তাক্ত করার কা- করেছে ছাত্রলীগের নেতাই। সরকার সমর্থিত বুদ্ধিজীবী, সুশীল, বিদ্যাজীবী, সংস্কৃতিসেবীরা সব সময় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দেন। টিভির টকশো-প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়র মাধ্যমে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দেয়া হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তারপরও ছাত্রলীগের তা-ব কমেনি বরং বেড়েছে। তাছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাদের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন নিজেদের স্বার্থে। যার কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চেষ্টা করেও নিজ দলের বেয়াড়া নেতাদের ‘তা-বীয় কর্মকা-’ থেকে সুপথে ফেরাতে পারেননি। তা ছাড়া মন্ত্রিত্বের চেয়ারে বসে ইসলামবিদ্বেষী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশ দেন যারা হরতালে রাজপথে মিছিল করবে ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের গুলি করো। ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবুল আলম হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসের পথে উসকে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস নামের ‘চর’ থেকে ২০০৯ সালে ছাত্রদল বিতাড়িত হওয়ার পর সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ‘চর’ নামের ক্যাম্পাস দখল করে ছাত্রলীগ। অতঃপর প্রতিপক্ষ ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির না থাকায় নিজেদের মধ্যেই কলহে লিপ্ত হয়। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও দখলদারিত্বের পাশাপাশি নিজেরাই রক্তারক্তি করে। এই কয়েক বছরে শুধু ছাত্রলীগের হাতেই ছাত্রলীগের ৩০ জন নেতা প্রাণ হারান। আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার। অনেকেই হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন নিজ দলের নেতাদের নৃশংসতায়। আর গোলাগুলি ও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় দেড় হাজার। ছাত্রলীগের তা-বে সরকারের উন্নয়ন এবং সব অর্জন যখন ম্লান হওয়ার পথে তখন প্রবীণ নেতাদের সবাই নীরবতা পালন করেন। একমাত্র ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হওয়ার আগ থেকে ছাত্রলীগের তা-বের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলেন।
সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর গত কয়েক দিনে ওবায়দুল কাদের যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা যদি কাজে পরিণত করেন তাহলে তার ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে। সরকারের ইমেজও বাড়বে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জ্যোতিসশাস্ত্রে যে ‘শনির দশা’ বা ‘শনির দৃষ্টি’ আওয়ামী লীগের ইমেজে পড়েছিল তা কার্যত কেটে গেছে। উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অগ্রগতি, ভারতের সঙ্গে বিনিয়োগের ২২ চুক্তি, চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বড় অর্জন। সব বিতর্ক টেক্কা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতেই নৌকার হাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। ’১৯৮১ সাল তথা ৩৬ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের কা-ারী। যোগ্য নেতৃত্বে শত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে দলকে তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিতর্ক আড়াল করে বিশ্বরাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন বড় সুসময়। ‘রাজনীতি’ না থাকায় উন্নয়ন কর্মকা-ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তার অর্জনের মধ্যে সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে রফতানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স তার নেতৃত্বকে শুধু বিশ্বনেতাদের সামনে উদ্ভাসিতই করেনি; দুনিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে একজন হিসেবে স্বীকৃত করেছে। অর্থনৈতিক কূটনীতির জায়গা থেকে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট রেখে একদিকে সার্ক সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা; অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার কথাও দৃঢ়তা। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সবদিকে। দিল্লিকে তুষ্ট রেখেই চীনের প্রেসিডেন্টের আগমন এবং বিনিয়োগের ঘোষণা ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আরো বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন গুরুত্বপূর্ণ; তেমনি চীনসহ অন্যান্য দেশের জন্যও। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন; আবার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আগামী নির্বাচনের চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে জাতীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন। একঝাঁক মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে গঠন করা নতুন কমিটিকে বিজ্ঞজনেরা বলছেন ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনী কমিটি’। এ অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এটা ওবায়দুল কাদেরের জন্য রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্রকে চাপা দিয়ে রেখে শুধুই উন্নয়ন কখনোই টেকসই হয় না। উন্নয়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি। জনগণ ও বিরোধী দলের মত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টি সরকারের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ বর্ণাঢ্য কাউন্সিল করেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অথচ বিএনপি ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পালনের ঘোষণা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ হুমকি দিয়েছেন ‘বিএনপিকে ৭ নভেম্বর পালন করতে দেয়া হবে না’। গণতন্ত্রে ‘আমি যা খুশি করব অন্যকে কিছুই করতে দেবো না’ এ নীতি চলে না। শুধু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নয়; এসব নেতার গোয়ার্তুমি-এগুঁয়েমির কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক অর্জন ম্লান হয়েছে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে জন্ম দেয়া দলটির কয়েক বছরের কর্মকা-ে ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বের সময়ে এমনটা হবে না এটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। এতগুলো ঝানু নেতা থাকার পরও যাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তার বৃহস্পতি তুঙ্গে হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব যথাযথ পালনের মাধ্যমে তার ইমেজ রক্ষা করা সময়ের দাবি। তাকে ‘বৃহস্পতি আমার এখন তুঙ্গে/শনির দশা শেষ হয়েছে কবে/ চন্দ্র এসে ভর করেছে........’ গানের মতো আত্মতৃপ্ত নয়; বরং বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করে শেখ হাসিনার ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করা জরুরি। ওবায়দুল কাদের প্রথমেই যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছেন তা অব্যাহত থাকলে তাকে সফলতার পথই দেখাবে। পোড় খাওয়া ঝানু এবং স্পষ্টভাষী নেতা ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে যে সরকারের ভাবমর্যাদা রক্ষা এবং দেশে গণতন্ত্রের আবহ সৃষ্টি করা সম্ভব; সেটা মানুষ বিশ্বাস করে। অতএব, ওবায়দুল কাদেরের এখনই সময়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Miraz ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৬ পিএম says : 0
akdom thik kotha bolesen
Total Reply(0)
Anisur Rahman ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৭ পিএম says : 0
I think he is the perfect man for this post.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন